HSC
On This Page

প্রাণীর পরিচিতি (দ্বিতীয় অধ্যায়)

জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - প্রাণীর পরিচিতি (দ্বিতীয় অধ্যায়)

বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে নানা প্রাণীর বাস। এর মধ্যে হাইড্রা,রুইমাছ ও ঘাসফড়িং এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Content added By

প্রতীক প্রাণীঃ ঘাসফড়িং

প্রতীক প্রাণীঃ  ঘাসফড়িং (The Grasshopper):

আরশোলার মতো ঘাসফড়িংও একটি অতিপরিচিত পতঙ্গ (insect)। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সবখানে সবুজ শস্যক্ষেত বা সবজির বাগানে বিভিন্ন ধরনের ঘাসফড়িং একা বা দলবদ্ধ হয়ে বিচরণ করে। ঘাসফড়িং-এর কিছু প্রজাতি পঙ্গপাল (locust) নামে পরিচিত। এগুলো বাদামি বর্ণের মাঝারি আকৃতির পতঙ্গ এবং ঝাঁক বেঁধে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। কখনও কখনও এদের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে মুহুর্তের মধ্যে একটি ক্ষেত্রের সমস্ত ফসল খেয়ে সাবাড় করে ফেলতে পারে। পঙ্গপাল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের শস্যক্ষেতের জন্য মারাত্মক হুমকি ।

ঘাসফড়িং যেহেতু একটি করে কাইটিনময় বহিঃকংকাল, একটি তিনখণ্ডবিশিষ্ট দেহ (মস্তক, বক্ষ ও উদর), তিনজোড়া সন্ধিযুক্ত পা, জটিল পুঞ্জাক্ষি এবং একজোড়া অ্যান্টেনা বহন করে সে কারণে এদের Insecta শ্রেণিভুক্ত সদস্য বা পতঙ্গ নামে অভিহিত করা হয়। ঘাস ও লতাপাতার মধ্যে থেকে সেখানেই লাফিয়ে লাফিয়ে চলে দেখে এর নাম হয়েছে “ঘাসফড়িং”।

সাড়া পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় এগারো হাজার প্রজাতির ঘাসফড়িং শনাক্ত করা হয়েছে। সাধারণ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে রয়েছে Schistocerca americana, Romalea microptera,Poekilocerus pictus.

 

বাসস্থান (Habitat) : ঘাসফড়িং যেহেতু ঘাস, পাতা, শস্য ও শস্যের কচিপাতা আহার করে সে কারণে এমন ধরনের নিচু বসতি এদের পছন্দ। মূলত সব ধরনের বসতিতেই (তৃণভূমি, বারিবন, চারণভূমি, মাঠ, মরুভূমি, জলাভূমি প্রভৃতি) বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসফড়িং দেখা যায়। স্বাদুপানির ও ম্যানগ্রোভ জলাশয়ে যেহেতু পানির উঠানামা বেশি হয় এবং ডিম পাড়ার জায়গা প্লাবিত হয়ে যায় সে কারণে এসব বসতিতে ঘাসফড়িং কম বাস করে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘাসফড়িং বিপুল সংখ্যায় পরিযায়ী (migratory) হয়, দিনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।

খাদ্য (Food) : ঘাসফড়িং তৃণভোজী বা শাকাশী (herbivorous) প্রাণী। ডিম থেকে ফোটার পরপরই, নিম্ফ অবস্থায় ঘাসফড়িং চার পাশের যে কোন ছোট ছোট, সহজপাচ্য গাছ, ঘাস বা নতুন কোমল শাখা-প্রশাখা খেতে শুরু করে । দু'একবার খোলস মোচনের পর একটু বড় হলে শক্ত উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে। তরুণ ঘাসফড়িং পূর্ণাঙ্গদের মতোই নির্দিষ্ট উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করে। তখন খাদ্য তালিকায় ঘাস, পাতা ও শস্য প্রধান খাবার হিসেবে উঠে আসে। বেশির ভাগ ঘাসফড়িং অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে আহার সংগ্রহ করে, দু'একটি প্রজাতি সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে।

Content added || updated By
অপেক্ষাকৃত খাটো ও চওড়া
অপেক্ষাকৃত লম্বা ও সরু
উদরের পিছন বাড়ানো নয়
কোন স্টাইল থাকনো

হৃদযন্ত্রের স্পন্দন প্রতি মিনিটে 100 থেকে 110 বার

Blattella germaniea তেলাপোকা অপেক্ষাৃত খাটো

পুরুষ তেলাপোকার উদর অপেক্ষা বড়

তেলাপোকার ট্রাইকিয়া রুপর মতো চকচকে

মল হতে অতিরিক্ত পানি শোষণ করা রেকটামের কাজ
পরিপাক ক্রপেই শুরু হয়
মেসেন্টেরণেল অ্যামাইলেজ লিপিডকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল ও পরিণত করে
কোনোটিই নয়

ঘাসফড়িং এর শ্রেণিবিন্যাস

ঘাসফড়িং এর শ্রেণিতাত্ত্বিক অবস্থানঃ

Phylum: Arthropoda

  Class: Insecta

     Subclass: Pterygota

        Order: Orthoptera

           Family: Acrididae

              Genus: Poekilocerus   

                  Species: Poekilocerus pictus

Content added || updated By

ঘাসফড়িং এর বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান

বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান (External Morphology):

ঘাসফড়িং-এর দেহ সরু, লম্বাটে, বেলনাকার (cylindrical) এবং দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম। পূর্ণাঙ্গ প্রাণী লম্বায় ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেহের রঙ অনেকটা হলদে-সবুজ (yellowish green) ধরনের অথবা বাদামি রঙের মাঝে নানা ধরনের ফোঁটা (spots) বা ডোরাকাটা (markings) হতে পারে। মিশ্রিত এ রঙ তাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে এমনকি শত্রুর হাত থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিছু ঘাসফড়িং আছে উজ্জ্বল নীল-হলুদ রঙের (যেমন- Poekilocerus pictus)।

ঘাসফড়িং-এর সারাদেহ কাইটিনযুক্ত কিউটিকল (cuticle)- এ আবৃত। বহিঃকঙ্কাল হাইপোডার্মিস (hypodermis) নিঃসৃত পদার্থে সৃষ্ট এবং প্রত্যেক দেহখন্ডকে স্ক্লেরাইট (sclerite) নামক কঠিন প্লেটের মতো গঠন সৃষ্টি করে। স্কেলেরাইটগুলোর সংযোগস্থল সূচার (suture) নামে পাতলা নরম ঝিল্লিতে আবৃত। সূচারের উপস্থিতির কারণে দেহখণ্ডক ও উপাঙ্গগুলো সহজেই নড়াচড়া করতে পারে। কিউটিকলের ভিতরে ও নিচে নানা ধরনের রঞ্জক পদার্থ (pigments) থাকায় ঘাসফড়িং-এ বর্ণময়তা দেখা যায়।

ঘাসফড়িং-এর দেহ খণ্ডকায়িত এবং অন্যসব পতঙ্গের মতো তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত, যেমন—

ক. মস্তক (Head)- পুঞ্জাক্ষি, অ্যান্টেনা ও মুখোপাঙ্গ বহন করে।

খ. বক্ষ (Thorax)- তিনজোড়া পা ও দুজোড়া ডানার সংযোগ সাধন করে এবং বহন করে।

গ. উদর (Abdomen)- শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (spiracle) এবং জনন অঙ্গসমূহ (genitaliae) ধারণ করে।

ক. মস্তক (Head): বাইরে থেকে অখন্ডিত (একক) মনে হলেও মূলত ৬টি ভ্রূণীয় খণ্ডকের (embryonic segments) সমন্বয়ে মস্তক গঠিত। এটি দেখতে নাশপাতি আকৃতির এবং হাইপোগন্যাথাস (hypognathous) ধরনের অর্থাৎ মুখছিদ্র নিম্নমুখী হয়ে মস্তকের নিচে অবস্থান করে। মস্তক একটি ছোট ও স্থিতিস্থাপক গ্রীবার সাহায্যে বক্ষলগ্ন হয়ে দেহের সমকোণে অবস্থান করে। ঘাসফড়িং গ্রীবার মাধ্যমে মস্তককে বিভিন্ন দিকে ঘোরাতে পারে। মস্তকের বহিঃকঙ্কালের নাম হেড ক্যাপস্যুল (head capsule) বা এপিক্রেনিয়াম (epicranium)। মস্তকের বহিঃকঙ্কাল কয়েকটি অংশে বিভক্ত, যেমন- পৃষ্ঠদেশের ত্রিকোণাকার অঞ্চলটি ভার্টেক্স (vertex), দুপাশে অবস্থিত জেনা (gena), কপালের দিকে চওড়া ফ্রন্স (frons) এবং ফ্রন্সের নিচে আয়তাকার প্লেটটি ক্লাইপিয়াস (clypeus)।
ঘাসফড়িং-এর মস্তক একজোড়া পুঞ্জাক্ষি, তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি (ocilli), একজোড়া অ্যান্টেনা (antenna) ও এক সেট মুখোপাঙ্গ বহন করে। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।

১. পুঞ্জাক্ষি (Compound eye) : ঘাসফড়িং (Grasshopper)-এর মস্তকের উভয়দিকে পৃষ্ঠ-পার্শ্বদেশে, ১ম খণ্ডকে একজোড়া পুঞ্জাক্ষি থাকে। এগুলো অবৃন্তক এবং মস্তকের এক বিরাট অংশ দখল করে থাকে। দৃষ্টিশক্তির দিক থেকে ঘাসফড়িং আর্থোপোড অপেক্ষা উন্নত। এরা সম্ভবত রঙিন বস্তুও সঠিকভাবে দেখতে পায়। গঠনগত ও কার্যকারিতার দিক থেকে যে কোনো ঘাসফড়িং-এর পুঞ্জাক্ষি আরশোলা, চিংড়ি প্রভৃতি আর্থোপোড প্রাণীর মতো। অসংখ্য ওমাটিডিয়া (ommatidia)-র সমন্বয়ে একেকটি পুঞ্জাক্ষি গঠিত হয়। ওমাটিডিয়াই পুঞ্জাক্ষির গঠন ও কাজের একক।

২. ওসেলি (Ocelli; একবচনে-occllus) : ঘাসফড়িং-এর দুটি পুঞ্জাক্ষির মাঝখানে তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি থাকে । প্রত্যেক ওসেলাস পুরু, স্বচ্ছ কিউটিকলনির্মিত লেন্স ও একগুচ্ছ আলোক সংবেদী কোষ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষ রঞ্জক পদার্থসমৃদ্ধ। ওসেলাসের তলদেশে মস্তিষ্কে গমনকারী স্নায়ুতন্ডু (nerve libre) অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে আলোক সংবেদী কোষ থাকে যারা রেটিনার মতো কাজ করে।

৩. অ্যান্টেনা (Antenna; বহুবচনে-antennae) বা শুঙ্গ : ঘাসফড়িং-এর পুঞ্জাক্ষির সামনে, মাথার দুপাশে দুটি লম্বা অ্যান্টোনি প্রসারিত থাকে। অ্যান্টোনি দুটি সামনে রেখে চলাফেরা করে এবং ইচ্ছামতো এগুলোকে নাড়াতে পারে। এদুটি নাড়িয়ে এরা স্পর্শ, ঘ্রাণ ও শব্দতরঙ্গ অনুভর করে। স্কেল, পেডিসেন্স ও ফ্লাজেলাম-এ তিনটি অংশ নিয়ে প্রত্যেক অ্যান্টেনা গঠিত। পেডিসেল খাটো ও অবিভক্ত। ফ্লাজেলাম বেশ লম্বা ও প্রায় ২৫টি খণ্ডকে বিভক্ত।

৪. মুখোপাঙ্গ (Mouth parts) : মুখের চারদিক ঘিরে অবস্থিত নড়নক্ষম, সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গগুলোকে একত্রে মুখোপাঙ্গ বলে। ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গ মস্তকের অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত। কচিপাতা বা কাণ্ড চর্বনে ব্যবহৃত হয় বলে ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গকে চর্বন-উপযোগী (chewing) বা ম্যান্ডিবুলেট (mandibulate) মুখোপাঙ্গ বলে। পাঁচটি অংশের সমন্বয়ে মুখোপাঙ্গ গঠিত- ল্যাব্রাম, ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা, ল্যাবিয়াম ও হাইপোফ্যারিংক্স।


খ. বক্ষ (Thorax) : মস্তকের পিছনে মাংসল বক্ষ একটি খাটো, সরু ও নমনীয় গ্রীবা (neck)-র সাহায্যে যুক্ত। ঘাসফড়িং-এর বক্ষাঞ্চল তিনটি অংশে বিভক্ত; যথা-অগ্রবক্ষ (prothorax), মধ্যবক্ষ (mesothorax) এবং পশ্চাৎবক্ষ (metathorax)। প্রত্যেক অংশের পৃষ্ঠদেশ টার্গাম (tergum), অঙ্কীয়দেশ স্টার্নাম (stermum) ও পার্শ্বদেশ প্লিউরন (pleuron)-এ গঠিত। এগুলো পাতলা কিউটিকলের পর্দা দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত। অগ্রবক্ষের টার্গাম অংশটি বেশ বড়, চওড়া এবং পিছনে ও পাশে প্রসারিত । এর নাম প্রোনোটাম (pronotum) বক্ষাঞ্চলে রয়েছে শ্বাসরন্ধ্র, ডানা ও পা।

১. শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (Spiracle) : বক্ষের অঙ্কীয়-পার্শ্বদেশে দুজোড়া শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল অবস্থিত। প্রথম জোড়া প্রোনোটামের নিচে অগ্র ও মধ্যবক্ষের মাঝে এবং দ্বিতীয় জোড়া মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষের মাঝে অবস্থিত ।

২. ডানা (Wings) : মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষের পিঠের দিকে অর্থাৎ টার্গাম ও প্লিউরনের মধ্যবর্তীস্থান থেকে একজোড়া করে মোট দুজোড়া পাতলা কিউটিকল নির্মিত ডানা রয়েছে। ডানাগুলো প্রথম অবস্থায় দ্বিস্তরবিশিষ্ট প্রাচীর হিসেবে থলির মতো সৃষ্টি হয়, পরে পূর্ণাঙ্গ ডানায় পরিণত হয়। প্রত্যেক ডানা অসংখ্য ছোট নালির মতো ও রক্তে পূর্ণ শিরা-উপশিরায় গঠিত। দুজোড়া ডানার গঠন ও কাজ পৃথক ধরনের। মধ্যবক্ষীয় (mesothoracic) ডানা অর্থাৎ সামনের ডানাদুটি বেশ শক্ত, ছোট, সরু এবং কখনও উড়তে সাহায্য করে না। এগুলো পিছনের দুই ডানাকে ঢেকে রাখে। সেজন্য এগুলোকে এলিট্রা (elytra), ডানার আবরণ (wing covers) বা টেগমিনা (tegmina) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পিছনের বা পশ্চাৎবক্ষীয় (metathoracic) ডানাদুটি বেশ বড়, চওড়া, পর্দার মতো (membranous), স্বচ্ছ এবং উড়তে সাহায্য করে। বিশ্রামের সময় পিছনের ডানাজোড়া অগ্র ডানার নিচে গুটানো থাকে।


৩. পা (Legs) : বক্ষের প্রত্যেক অংশে একজোড়া করে মোট তিনজোড়া পা রয়েছে। প্রতিটি পা পাঁচখণ্ডে বিভক্ত। একেবারে গোড়ায় স্থূল, তিনকোণা কক্সা (coxa); এর পরের ত্রিভূজাকার ক্ষুদ্র ট্রোক্যান্টার (trochanter); পরের লম্বা, নলাকার ও দৃঢ় ফিমার (femur); তার পরবর্তী সরু টিবিয়া (tibia); এবং সবশেষে টার্সাস (tarsus) । টার্সাস তিনটি ছোট উপখণ্ডকে বিভক্ত । এগুলোকে টার্সোমিয়ার (tarsomeres) বলে । টার্সাসের মাথায় সূঁচালো নখর (claws) থাকে। এ ছাড়াও প্রত্যেক পায়ের টিবিয়া ও টার্সাস অংশের পার্শ্বদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূঁচালো কাঁটা থাকে। ঘাসফড়িং-এর পা হাঁটা ও আরোহণে ব্যবহৃত হয়। তবে ফিমার অংশ অনেক বড় ও মাংসল গড়নের হওয়ায় এরা লাফিয়ে দূরের পথ অতিক্রম করতে পারে। টিবিয়া ও টার্সাস শক্ত কাঁটাযুক্ত হওয়ায় খাদ্য ধরতে সাহায্য করে।


গ. উদর (Abdomen) : ঘাসফড়িং-এর উদর বেশ লম্বা, সরু এবং ১১টি খণ্ডকে বিভক্ত। প্রত্যেক খণ্ডকের পৃষ্ঠদেশে টার্গাম (tergum) এবং অঙ্কীয়দেশে স্টার্নাম (sternum) থাকে, কোন প্লিউরন থাকে না। ১ম উদরীয় খণ্ডকটি অসম্পূর্ণ; কারণ, এর স্টার্নাম পশ্চাৎবক্ষের সাথে যুক্ত থাকে । এতে শুধু টার্গাম থাকে । ঘাসফড়িং-এর উদরাঞ্চল নিচে বর্ণিত অঙ্গসমূহ বহন করে।

১. টিমপেনাম (Tympanum) : ১ম খণ্ডকের প্রতিপাশে একটি করে পর্দা রয়েছে যা শ্রবণ অঙ্গ বা শ্রবণ থলি (auditory sac)-কে আবৃত রাখে । এর নাম টিমপেনিক পর্দা বা টিমপেনাম ।

২. শ্বাসরন্ধ্র (Spiracle) : ১ম থেকে ৮ম দেহখণ্ডক পর্যন্ত প্রতিটি খন্ডকের পার্শ্বদেশে একজোড়া করে মোট আটজোড়া শ্বাসবন্ধ্র বা স্পাইরাকল থাকে যার প্রথমটি অন্যগুলো হতে আকারে বড় ।

৩. পায়ু ও বহিঃজনন অঙ্গ : ৯ম ও ১০ম উদরীয় খণ্ডকের টার্গাম আংশিকভাবে ও স্টার্নাম পুরোপুরি একীভূত। ১১শ খণ্ডকের টার্গাম পায়ুর উপরে প্লেটের মতো একটি আবরণ (supra anal plate) তৈরি করে। পুরুষ ও স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের উদর অঞ্চলের গঠনে কিছু পার্থক্য দেখা যায় । পুরুষ ঘাসফড়িং-এর ১০ম খন্ডের পেছন দিকের উভয় পাশে একজোড়া ছোট প্রক্ষেপক রয়েছে যা অ্যানাল সারকাস (anal cercus, বহুবচনে anal cerci) নামে পরিচিত। স্ত্রী ঘাসফড়িং-এর ৯ম স্টার্নাম লম্বাকৃতির যা স্ত্রীজননরন্ধ্র ধারণ করে। এদের উদরের শেষ প্রান্তে ৮ম ও ৯ম খন্ড অঙ্কীয়ভাবে একটি নলাকৃতি বিশেষ অঙ্গ তৈরি করে, যার নাম ওভিপজিটর (ovipositor)।

Content added By

ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গের বিভিন্ন অংশঃ


ল্যাব্রাম (Labrum) : এটি দেখতে অনেকটা চাপা চাকতির মতো এবং উপরের ওষ্ঠ (lip) গঠন করে। রঙ সবুজ, বাদামি বা অন্য ধরনের হতে পারে। এর মাঝ বরাবর অংশে একটি খাঁজ দেখা যায়। খাঁজটি খাবার ধরে রাখতে, ম্যান্ডিবলের দিকে ঠেলে দিতে ও স্বাদ নিতে সাহায্য করে।

ম্যান্ডিবল (Mandible) : মুখছিদ্রের দুপাশে অবস্থিত, তিনকোণা ও কালো বা বাদামি রঙের বেশ শক্ত ও ভিতরের দিকে সুঁচালো করাতের মতো দাঁতযুক্ত দুটি উপাঙ্গের নাম ম্যান্ডিবল বা চোয়াল। খাদ্য কেটে চিবানোয় চোয়াল সাহায্য করে।

ম্যাক্সিলা (Maxilla) : ম্যান্ডিবলের পিছনে ও বাইরের দিকে প্রতিপাশে একটি করে লম্বাকার ম্যাক্সিলা থাকে। প্রত্যেক ম্যাক্সিলা কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত। সবচেয়ে গোড়ার খণ্ডটিকে কার্ডো (cardo) ও এরপর অবস্থিত খণ্ডককে স্টাইপস (stipes) বলে। স্টাইপসের অগ্রভাগে নখের মতো ল্যাসিনিয়া (lacinia) ও ঢাকনির মতো গ্যালিয়া (galea) নামক দুটি খণ্ড পাশাপাশি অবস্থান করে। গ্যালিয়ার পাশে পাঁচ অংশবিশিষ্ট ম্যাক্সিলারি পাল্প (maxillary palp) রয়েছে। এর উপর থাকে সূক্ষ্ণ রোম। খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ, এটি ধরে রাখতে, মুখের ভিতর প্রবেশ করাতে এবং খাদ্য চূর্ণকরণে সাহায্য করা ম্যাক্সিলার কাজ। ম্যাক্সিলারি পাল্প অ্যান্টেনা ও পায়ের অগ্রভাগ পরিষ্কারে অংশ নেয়, খাদ্যবস্তু হরণ প্রতিরোধ করে এবং সংবেদী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।


ল্যাবিয়াম (Labium): ঘাসফড়িং-এর মুখছিদ্রের নিচে মধ্যাংশ বরাবর স্থানে বহুসন্ধিল একটি ল্যাবিয়াম বা অধঃওষ্ঠ রয়েছে। ল্যাবিয়ামকে দ্বিতীয় জোড়া ম্যাক্সিলির প্রতিনিধি মনে করা হয়। এটি মূলত দুটি খণ্ডে বিভক্ত, যথা—মেন্টাম (mentum) সাবমেন্টাম (submentum)। প্রতিপাশে মেন্টামের মুক্ত প্রান্তে দুটি নড়নশীল লিগুলি (ligulae) এবং তিন সন্ধিযুক্ত ল্যাবিয়াল পাল্প (labial palp) থাকে। এটি খাবার ফসকে যাওয়া রোধ করে ও চর্বিত খাদ্য মুখে প্রবেশ করায়। ল্যাবিয়াল পাল্প সংবেদনশীল অঙ্গ হিসেবে কাজ করায় এটি উপযুক্ত খাদ্য নির্বাচনে সাহায্য করে।

হাইপোফ্যারিংক্স (Hypopharynx) : ল্যাব্রামের নিচে ক্ষুদ্র, মাংসল হাইপোফ্যারিংক্স বা উপজিহ্বাটি অবস্থিত। এটি চারদিকে ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা ও ল্যাবিয়াম দিয়ে পরিবৃত থাকে। ল্যাবিয়ামের ভিতরের কিনারা থেকে সৃষ্ট একটি ঝিল্লি হাইপোফ্যারিংক্সের অংকীয়তলের সাথে যুক্ত থাকে। খাদ্যবস্তুকে নাড়াচাড়া করে লালার সাথে মেশাতে সাহায্য করাই এর কাজ। 
 

Content added || updated By
সঙ্গমে সহায়তা
শুক্রাণু পরিবহন
শুক্রাণুর পুষ্টিদান
ক্লাইপিয়াস

ঘাসফড়িং এর পৌষ্টিকতন্ত্র

ঘাসফড়িং এর পৌষ্টিকতন্ত্র (Digestive System of Grasshopper): ঘাসফড়িং-এর খাদ্যাভ্যাসের সাথে পৌষ্টিকতন্ত্র অভিযোজিত এবং প্রধান দুটি অংশ নিয়ে গঠিত যথা-পৌষ্টিকনালি ও পৌষ্টিকগ্রন্থি। 

পৌষ্টিকনালি (Alimentary Canal) : ঘাসফড়িং-এর পৌষ্টিকনালি সরল প্রকৃতির এবং মুখছিদ্র থেকে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত দেহের মধ্যরেখা বরাবর সোজা নালি হিসেবে অবস্থিত। বর্ণনার সুবিধার জন্য পৌষ্টিকনালিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে : স্টোমোডিয়াম, মেসেন্টেরন ও প্রোক্টোডিয়াম।

১. স্টোমোডিয়াম বা অগ্র-পৌষ্টিকনালি (Stomodaeum or Foregut) : এটি মুখছিদ্র থেকে গিজার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত পৌষ্টিকনালির প্রথম অংশ। ভূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভূত এ অংশটির অন্তঃপ্রাচীর কাইটিন (chitin) নির্মিত শক্ত আবরণে আবৃত। এটি প্রধানত নিচে উল্লেখিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।

ক. মুখছিদ্র (Mouth) : এটি প্রাকমৌখিক প্রকোষ্ঠ (preoral cavity) বা সিবেরিয়াম (cibarium) নামক প্রকোষ্ঠের গোড়ায় অবস্থিত ছিদ্রবিশেষ প্রকোষ্ঠটি মুখোপাঙ্গে বেষ্টিত থাকে ৷

কাজ : সিবেরিয়ামে খাদ্যবস্তু গৃহীত হয় এবং মুখছিদ্র পথে খাদ্য দেহে প্রবেশ করে ।

খ. গলবিল (Pharynx) : মুখছিদ্রটি ছোট নলাকার ও পেশিবহুল গলবিলে উন্মুক্ত।

কাজ : এর মাধ্যমে খাদ্যবস্তু গ্রাসনালিতে প্রবেশ করে ।

গ. গ্রাসনালি (Oesophagus) : এটি গলবিলের পিছনে সরু, সোজা, নলাকার পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট নালি।

কাজ : খাদ্যবস্তু মুখ থেকে বহন করে ক্রপে পৌছে দেয়।

ঘ. ক্রপ : গ্রাসনালি স্ফীত হয়ে মোচাকৃতি থলির মতো ও পাতলা প্রাচীরযুক্ত ক্রপ গঠন করে।

কাজ : খাদ্যবস্তু কিছু সময়ের জন্য এখানে জমা থাকে। ক্রপের সংকোচন প্রসারণে খাদ্য কিছুটা চূর্ণ হয় এবং লালার এনজাইম পরিপাকের সূত্রপাত ঘটায়।

 

ঙ. গিজার্ড বা প্রোভেন্ট্ৰিকুলাস (Gizzard or Proventriculus) : এটি গ্রুপের পরবর্তী ত্রিকোণাকার বেশ শক্ত, পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট এবং অন্তঃপ্রাচীরের কাইটিনময় ছয়টি দাঁত ও ছয়টি অনুলম্ব ভাঁজ নিয়ে গঠিত অংশ। দাঁতের পিছনে চুল ও ছয়টি প্যাড থাকে। এর পরের অংশে থাকে পিছনে প্রসারিত কপাটিকা । 

কাজ : গিজার্ডের দৃঢ় সংকোচন-প্রসারণ খাদ্যকে চূর্ণ করে; প্যাডের চুলগুলো খাদ্যকণাকে মেসেন্টেরনে প্রবেশের সময় ছাঁকনির কাজ করে; এবং কপাটিকাগুলো খাদ্যকে বিপরীত দিকে আসতে বাধা দেয়।

 

২. মেসেন্টেরন বা মধ্য-পৌষ্টিকনালি বা পাকস্থলি (Mesenteron on Midgut) : গিজার্ডের পর থেকে শুরু করে উদরের মধ্যাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট অংশটি মেসেন্টেরন । এটি ভ্রূনীয় এন্ডোডার্ম স্তর থেকে সৃষ্টি হয় এবং এর অন্তঃপ্রাচীর কিউটিকলের পরিবর্তে পেরিট্রফিক পর্দা (peritrophic mentirane) নামক বৈষম্যভেদ্য পর্দা দিয়ে আবৃত। মেসেন্টেরনের অগ্র ও পশ্চাৎ প্রান্তে পেশির বলয় বা স্ফিংক্টার (sphincter) থাকে। মেসেন্টেরন এবং স্টোমোডিয়ামের সংযোগস্থলে ৬ জোড়া ফাঁপা, লম্বা মোচাকার থলি থাকে। সেগুলো হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক সিকা (gastric caeca) বা হেপাটিক সিকা (hepatic caeca)। প্রতিজোড়া হেপাটিক সিকার একটি সামনের দিকে অন্যটি পিছন দিকে প্রসারিত। মেসেন্টেরনের অন্তঃপ্রাচীর স্তম্ভাকার অস্তঃত্বকীয়  কোষে (columnar endodermal cells)  গঠিত এবং  এটি ভাজ হয়ে অসংখ্য ভিলাই (villi) গঠন করে। মেসেন্টেরনের শেষ অংশে অসংখ্য সূক্ষ্ম চুলের মতো এবং হলদে বর্ণের অঙ্গাণু থাকে। এগুলো ম্যালপিজিয়ান নালিকা (malpighian tubules) যা মূলত রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

কাজ : মেসেন্টেরনের গহ্বর (lumen)-এ খাদ্যবস্তুর পরিপাক ঘটে এবং এর প্রাচীরে অবস্থিত ভিলাই খাদ্যরস শোষণ করে।

৩. প্রোক্টোডিয়াম পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালি (Proctodaeum or Hindgut) : 

এটি পৌষ্টিকনালির শেষ অংশ যা ভূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভূত এবং অন্তঃপ্রাচীর কিউটিকল দিয়ে আবৃত। নিচে বর্ণিত ৪টি অংশ নিয়ে প্রোক্টোডিয়াম গঠিত।

ক. ইলিয়াম (Iluem) : এটি প্যাচবিহীন, চওড়া নলাকার প্রথম অংশ।

কাজ : এর প্রাচীরের মাধ্যমে পরিপাককৃত খাদ্যরস শোষিত হয় ।

খ. কোলন (Colon) : এটি ইলিয়ামের পিছনে অবস্থিত সরু নলাকার অংশ।

কাজ : পাচিত খাদ্যবস্তুর বাকি অংশ পানিসহ শোষিত হয়। 

গ. রেকটাম বা মলাশয় (Rectum) : এটি পৌষ্টিকনালির সর্বশেষ স্ফীত ও পুরু প্রাচীরযুক্ত অংশ। এর অন্তঃস্থ প্রাচীরে ছয়টি রেকটাল প্যাপিলা (rectal papilla; বহুবচনে-papillae) নামক অনুলম্ব ভাঁজ রয়েছে।

কাজ : মল থেকে অতিরিক্ত পানি, খনিজ লবণ, অ্যামিনো এসিড শোষণ করা এবং অপাচ্য অংশ সাময়িক জমা রাখা এর কাজ।

ঘ. পায়ুছিদ্র (Anus) : এটি মলাশয়ের শেষপ্রান্তে অবস্থিত ছিদ্রপথ। এটি দশম দেহখণ্ডকের অঙ্কীয়দেশে উন্মুক্ত।

কাজ : অপাচ্য অংশ মল (faeces) হিসেবে দেহ থেকে অপসারণ করে।

 

পৌষ্টিকগ্রন্থি (Digestive Glands):

ঘাসফড়িং-এর লালাগ্রন্থি, মেসেন্টেরনের অন্তঃআবরণ এবং হেপাটিক সিকা পৌষ্টিকগ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। নিচে এসব অংশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।

১. লালাগ্রন্থি (Salivary glands) : এটি ঘাসফড়িং-এর প্রধান পৌষ্টিকগ্রন্থি। ত্রুপের নিচে ক্ষুদ্র, শাখাপ্রশাখা-যুক্ত একজোড়া লালাগ্রন্থি অবস্থিত। লালাগ্রন্থির নালি ল্যাবিয়ামের গোড়ায় গলবিলে উন্মুক্ত হয়।

কাজ : লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারস (saliva) খাদ্য গলাধঃকরণ ও চর্বণে সাহায্য করে। কিছু শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাকেও এটি ভূমিকা পালন করে।

২. মেসেন্টেরন বা মধ্য-পৌষ্টিকনালির অন্তঃআবরণ : মেসেন্টেরনের অন্তঃপ্রাচীরে বেশ কিছু ক্ষরণকারী কোষ (secretary cells) আছে যা থেকে পাচকরস ক্ষরিত হয়।

কাজ : ক্ষরিত পাচকরস খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয়। 

৩. হেপাটিক সিকা (Hepatic caeca) : অগ্র ও মধ্য-পৌষ্টিকনালির সংযোগস্থলে অবস্থিত কোণ (cone) আকৃতির ছয়জোড়া লম্বা স্বচ্ছ নালিকাকে হেপাটিক বা গ্যাস্ট্রিক সিকা বলে।

কাজ : হেপাটিক সিকার অন্তঃপ্রাচীরে অবস্থিত ক্ষরণকারী কোষ থেকে পাচকরস ক্ষরিত হয়ে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।

খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক (Feeding & Digestion):

খাদ্য : ঘাসফড়িং সম্পূর্ণ তৃণভোজী বা শাকাশী (herbivorous) প্রাণী। ঘাস, শস্যদানা, লতা-পাতা খেয়ে এরা জীবনধারণ করে। এদের খাবারে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় সমস্ত উপাদানই থাকে।

খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি : ঘাসফড়িংয়ের যে মুখোপাঙ্গ তা শুধু চিবানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এদের খাদ্য গ্রহণকে চর্বণ (chewing) এবং মুখোপাঙ্গকে চর্বণ-উপযোগী বা ম্যান্ডিবুলেট (chewing or mandibulate) মুখোপাঙ্গ বলে। ঘাসফড়িং প্রথমে ম্যাক্সিলারি ও ল্যাবিয়াল পাল্পের সাহায্যে খাদ্য নির্বাচন করে। অগ্রপদ, ল্যাব্রোম এবং ল্যাবিয়াম খাদ্যবস্তু আটকে ধরে। ম্যান্ডিবল ও ম্যাক্সিলি খাদ্যবস্তুর ক্ষুদ্র অংশ কেটে চোষণ করে।

পরিপাক : খাদ্য প্রাকমৌখিক প্রকোষ্ঠে পৌঁছার পরই লালাগ্রন্থি নিঃসত লালারস-এর সাথে মিশিতে হয়। লালারসে অ্যামাইলেজ, কাইটিনেজ ও সেলুলেজ এনজাইম থাকে যা বিভিন্ন শর্করাকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে। খাদ্যবস্তু প্রাকমৌখিক প্রকোষ্ঠ থেকে ক্রপে পৌছায়, এখান থেকে গিজার্ডে প্রেরিত হয়। আংশিক পরিপাককৃত খাদ্য গিজার্ডে প্রবেশ করলে কাইটিনময় দাঁতে পিষ্ট হয়ে অতি সূক্ষ্ম কণাসমৃদ্ধ পেস্ট (paste)-এ পরিণত হয়। এগুলো গিজার্ডে অবস্থিত সূক্ষ্ণ রোমে পরিস্রত হয়ে মেসেন্টেরনে প্রবেশ করে । মেসেন্টেরনের অন্তঃর্গাত্র এবং হেপাটিক সিকা ক্ষরণ ও শোষণতলরূপে কাজ করে। মেসেন্টেরনে মলটেজ, ট্রিপটেজ, অ্যামাইলেজ, ইনভার্টেজ, লাইপেজ প্রভৃতি এনজাইমের উপস্থিতিতে খাদ্যবস্তু সরল, তরল খাদ্যরসে পরিণত হয়। পরিপাককৃত খাদ্য  মেসেন্টেরনের  কোষীয় প্রাচীরের  মাধ্যমে  পরিশোধিত হয়ে হিমোসিলে প্রবেশ করে সারা দেহে পরিবাহিত হয়। অজীর্ণ খাদ্যবস্তু কোলনের ভিতর দিয়ে মলাশয়ে পৌছার আগেই কোলনের প্রাচীর তা থেকে পানি, লবণ, অ্যামিনো এসিড ও অজৈব আয়ন শোষণ করে নেয়। পরে কঠিন অপাচ্য বস্তু মলরূপে পায়ু পথে বাইরে নির্গত হয় ।

Content added || updated By

ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র

ঘাস ফড়িং এর রক্ত সংবহন তন্ত্রঃ দেহের প্রয়োজনীয় উপাদান, পুষ্টি প্ৰবা, হরমোন ইত্যাদি রক্তের মাধ্যমে দেহকোষে পৌছানো এবং দেহকোষ বিপাকে সৃষ্ট বর্জ্য একইভাবে রেচন অঙ্গে নিয়ে আসার প্রক্রিয়ার নামই সংবহন। রক্তের পথ অনুসারে প্রাণিদেহে  ২ ধরনের দেখা যায়, যেমন-মুক্ত (open) বা ল্যাকুনার (lacunar) বদ্ধ সংবহনতন্ত্র।

মুক্ত সংবহন : যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত হৃদ্যন্ত্র থেকে নালিকা পথে বের হয়ে উন্মুক্ত দেহগহ্বরে প্রবেশ দেহগহ্বর থেকে পুনরায় নালিকা পথে হৃদ্যন্ত্রে ফিরে আসে তার নাম মুক্ত সংবহন। অর্থাৎ রক্ত সবসময় র মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না। চিড়িং, পতঙ্গ, মলাস্কা প্রভৃতি প্রাণীর দেহে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়। বন্ধ সংবহন : যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত সবসময় রক্তবাহিকা ও হৃদ্যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ আবদ্ধ থেকে প্রবাহিত কখনোই দেহ গহ্বরে যুক্ত হয় না তাকে বলে বন্ধ সংবহন। অ্যানিলিড জাতীয় অমেরুদন্ডী প্রাণিদেহে এবং সকল মেরুদণ্ডীয় প্রাণীতে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়।

ঘাসফড়িং-এর রক্ত সংবহনতন্ত্র অনুন্নত ও মুক্ত ধরনের এবং তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত হিমোসিল, হিমোলিক ও পৃষ্ঠীয় বাহিকা। নিচে এসব অংশের বর্ণনা দেয়া হলো।

ক. হিমোসিল (Haemocoel; গ্রিক, haima = রক্ত + koiloma = গহ্বর ) : ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের সময় প্রধান সিলোমিক গহ্বর ব্লাস্টোসিলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যে নতুন গহ্বরের সৃষ্টি করে তাকে হিমোসিল বা মিক্সোসিল (mixocoel) বলে। হিমোসিল তখন মেসোডার্মাল পেরিটোনিয়ামের পরিবর্তে বহিঃকোষীয় মাতৃকায় (extra cellular matrix) আবৃত থাকে। এটি রক্তপূর্ণ থাকে। ঘাসফড়িং-এর হিমোসিল দুটি অনুগ্রস্থ পর্দা (diaphragm) দিয়ে তিনটি প্রকোষ্ঠ বা সাইনাস (sinus)-এ বিভক্ত। হৃৎযন্ত্রের তলদেশ বরাবর অবস্থিত। পর্দাকে পৃষ্ঠীয় পর্দা এবং স্নায়ুরজ্জুর ঠিক উপরে বিস্তৃত পর্দাকে অঙ্কীয় পর্দা বলে। এদের উপস্থিতির ফলে সৃষ্ট সাইনাস-তিনটি নিম্নরূপ-

i. পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (Pericardial sinus) এটি পৃষ্ঠীয় পর্দার ঠিক উপরে অবস্থিত। এতে হৃদ্যন্ত্র অবস্থান করে।

ii. পেরিভিসেরাল সাইনাস (Perivisceral sinus) এটি পৃষ্ঠীয় পর্দার নিচে অবস্থিত এবং পৌষ্টিকনালিকে ধারণ করে।

iii. পেরিনিউরাল সাইনাস (Perineural sinus): এটি অঙ্কীয়,

পর্দার নিচে অবস্থিত গহ্বর। এতে স্নায়ুরজ্জু অবস্থান করে। পর্দাগুলো ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় রক্ত প্রয়োজন মতো এক সাইনাস থেকে অন্য সাইনাসে যাতায়াত করতে পারে। অভীয় পর্দাটি পায়ের ভিতরেও বিস্তৃত।

কাজ : হিমোসিল দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, রক্ত ও লসিকা ধারণ করে। এর মাধ্যমে খাদ্যরস ও বর্জ্যবস্তু পরিবাহিত হয়।

খ. হিমালিম্ফ (Haemolymph) বা বর্ণহীন প্লাজমা এবং এর মধ্যে ভাসমান অসংখ্য বর্ণহীন রক্তকণিকা বা হিমোসাইট (haemocyte) নিয়ে ঘাসফড়িং-এর রক্ত গঠিত। রঙ হিমোসিল নামক গহ্বরে লসিকা (lymph)-র সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে বলে ঘাসফড়িংসহ বিভিন্ন পতঙ্গের রক্তকে হিমোলিক বলে। হিমোগ্লোবিন বা অন্য কোন ধরনের স্থাসবন্ধক না থাকায় এর রক্ত বর্ণহীন, শ্বসনে তেমন কোন ভূমিকা রাখে না।

কাজ: খাদ্যসার, রেচনন্দ্রা, হরমোন ইত্যাদি পরিবহনে; অ্যামিনো এসিড, কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি জমা রাখা, জীবাণু ধ্বং করা, তঞ্চনে সাহায্য করা এবং ডানার সঞ্চালন ও খোলস মোচনে সহায়তা করা হিমোলিকের কাজ।পৃষ্ঠীয় বাহিকা (Dorsal vessel) : দেহের মধ্য-পৃষ্ঠীয় অবস্থানে রক্ষিত এটি প্রধান স্পন্দনশীল অঙ্গ। এ অঙ্গ দুটি অংশে বিভক্ত- (i) অস্ট্রিয়াবিহীন সোজা নলাকার সম্মুখ ও পশ্চাৎ অ্যাওর্টা এবং (i) হৃদযন্ত্র । ঘাসফড়িং-এ একটি লম্বাটে, নলাকার হত্যপ্ত থাকে। এটি বক্ষ ও উদরীয় অঞ্চলের পৃষ্ঠদেশে মাঝ বরাবর যে গহ্বরে থাকে তাকে ... পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস (pericardial sinus) বলে। হৃদ্যন্ত্রটি সাতটি ফানেল আকার প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। প্রতিটি প্রকোষ্ঠে পার্শ্বীয় দিকে একটি করে মোট একজোড়া ছিদ্র বিদ্যমান। ছিদ্রগুলোকে অস্টিয়া (ostia, একবচনে- ostium) বলে। অস্টিয়ামে কপাটিকা (valve) থাকে, যা রক্তকে হৃদযন্ত্রে কেবলমাত্র প্রবেশ করতে দেয় কিন্তু বের হতে দেয় না। টারগামের অক্ষীয় তলের দুপাশ থেকে অ্যালারি পেশি (alary muscle) নামক ত্রিকোণাকার পাখার মতো বিশেষ ধরনের পেশি উৎপন্ন হয়ে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসের প্রাচীরে যুক্ত হয় এবং হৃদযন্ত্রের পার্শ্বীয়-অঙ্কীয় দেশেও যুক্ত থাকে। ঘাসফড়িংয়ে ৬ জোড়া অ্যালারি পেশি থাকে। এদের সংকোচন প্রসারণ রক্ত সংবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া (Mechanism of Blood Circulation) হৎযন্ত্র ও অ্যালারি পেশির সংকোচন-প্রসারণের ফলেই ঘাসফড়িং-এর দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত প্রবাহিত হয়। প্রত্যন্ত্রের প্রতিটি প্রকোষ্ঠ ক্রমাগত ঢেউয়ের মতো সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়। ঘাসফড়িং-এর হৃদযন্ত্রের স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১১০ বার। রক্ত সংবহন প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্তভাবে সম্পাদিত হয়।ঘাসফড়িংয়ের রক্তকে হিমোলিম্ফ (haemolymph) বলে। হিমোলিম্ফ পৃষ্ঠীয় অঙ্গসমূহ 

(ক) রক্তরস (Plasma): এটি বর্ণহীন তরল। এর 70% ই পানি। এতে মস্তকের সাইনাস অবস্থায় থাকে।

(খ) রক্তকণিকা (Haemocytes): ঘাসফড়িংয়ের রক্তরসে হিমোসাইট নামক বর্ণহীন শ্বেতকণিকা থাকে। এদের প্রতি ঘন মিমি রক্তে 15-60 হাজার হিমোসাইট থাকে। ঘাসফড়িংয়ের রক্তে কোনো পেরিভিসেরাল শ্বসন রঞ্জক থাকে না। হিমোসাইট তিন ধরনের হয়, যথা- প্রোহিমোসাইট (23%), ট্রানজিশনাল হিমোসাইট (68%) এবং বৃহৎ হিমোসাইট (9%)। Amold (1972) এর মতে ঘাসফড়িংয়ের রক্তরসে প্রোহিমোসাইট প্লাজমাটোসাইট, গ্রানুলোসাইট এবং স্কেরিওল কোষ  নামক চার ধরনের হিমোসাইট থাকে। ঘাসফড়িংয়ের রক্তকণিকায় কোনো শ্বসন রঞ্জক থাকে না।

অ্যালারি পেশির সংকোচনের ফলে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস থেকে অস্টিয়ার মাধ্যমে হৃদ্যন্ত্রে প্রবেশ করে। পরে কাছে পর্যায়ক্রমে পিছন দিক থেকে সামনের দিকে সংকুচিত হওয়ায় রক্ত সম্মুখে প্রবাহিত হয় এবং অ্যাওর্টার ভিতর দিয়ে মোগিলে পৌঁছে। অস্টিয়ায় কপাটিকা থাকায় রক্ত প্রত্যন্ত্র থেকে বাইরে আসতে পারে না। একইভাবে হৃদ্যন্ত্রের প্রকোষ্ঠসমূহের সংযোগস্থলে কপাটিকা থাকায় রক্ত পিছনের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। রক্ত প্রথমে মস্তকে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে পিছন দিকে প্রবাহিত হয়। হৃত্যন্ত্র যখন আবার প্রসারিত হয় তখন হিমোসিল হতে পেরিকার্ডিয়ামের প্রাচীরের ছিদ্রপথে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে ফিরে আসে। ঘাসফড়িং-এর সমাদেহে একবার রক্তপ্রবাহ সম্পন্ন হতে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে।

Content added || updated By
পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে
পেরিভিসেরাল সাইনাসে
পেরিনিউরাল সাইনাসে
হিমোলিম্ফে

ঘাসফড়িং এর শ্বসনতন্ত্র

ঘাসফড়িং এর শ্বসনতন্ত্রঃ  অন্যান্য স্থলচর পতঙ্গের মতো ঘাসফড়িংও শ্বসনের জন্য বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে। এদের শ্বসনতন্ত্র বেশ উন্নত হওয়ায় রক্তের অক্সিজেন বহনে অক্ষমতার ঘাটতি অনেকখানি পূরণ হয়েছে। ট্রাকিয়া নামক এক ধরনের সুক্ষ্ণ শ্বাসনালির শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে পরিবেশ গৃহীত অক্সিজেন সরাসরি দেহকোষে প্রবেশ করে এবং দেহকোষে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড একই পথে দেহনির্গত হয়। শ্বসন সম্পাদনের জন্য ট্রাকিয়া ও এর শাখা-প্রশাখাগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে ঘাসফড়িং-এ যে বিশেষ ধরনের শ্বসনতন্ত্র সৃষ্টি করেছে, তার নাম ট্রাকিয়ালতন্ত্র (trachaeal system)। ঘাসফড়িং-এর ট্রাকিয়ালতন্ত্র (শ্বসনতন্ত্র) নিচে বর্ণিত ৪ টি অঙ্গ নিয়ে গঠিত।

১. শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (Spiracle) : এগুলো ট্রাকিয়ালতন্ত্রের উন্মুক্ত ছিদ্রপথ। ঘাসফড়িং-এর দেহের উভয় পাশে মোট দশজোড়া শ্বাসরন্ধ্র রয়েছে। এর মধ্যে দুজোড়া বক্ষীয় অঞ্চলে এবং আটজোড়া উদরীয় অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিটি শ্বাসরন্ধ্র ডিম্বাকার ছিদ্রবিশেষ এবং পেরিট্রিম (peritreme) নামক কাইটিননির্মিত প্রাচীরে পরিবেষ্টিত থাকে। রন্ধ্রগুলোর মুখে সূক্ষ্ন রোমযুক্ত ছাঁকনি যন্ত্র (filtering apparatus) থাকায় ধূলাবালি, জীবাণু, পানি ইত্যাদি ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। পেশি নিয়ন্ত্রিত কপাটিকার সাহায্যে রন্ধ্রগুলো খোলে বা বন্ধ হয়। শ্বাসরন্ধ্র বন্ধ থাকলে দেহ থেকে জলীয় বাষ্প বেরোতে পারে না।


২. শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া (Tracheae) : প্রতিটি শ্বাসরন্ধ্র অ্যাট্রিয়াম (atrium) নামক একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে উন্মুক্ত। এখান থেকেই উৎপন্ন হয় সূক্ষ্ণ শাখা-প্রশাখাযুক্ত, স্থিতিস্থাপক, বহিঃত্বকীয় (ectodermal) ট্রাকিয়া যা ঘাসফড়িং-এর প্রধান শ্বসন অঙ্গ এবং সারাদেহে জালিকাকারে বিস্তৃত। ট্রাকিয়া ত্বকের অস্তঃপ্রবর্ধক হিসেবে গঠিত হয়। এদের প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট। বাইরের এপিডার্মিস গঠিত ভিত্তিঝিল্লি (basement membeine), মাঝখানে চাপা বহুভূজাকার কোযে গঠিত এপিথেলিয়াম (epithelium) এবং ভিতরের কিউটিকল নির্মিত ইন্টির্মা (intima)। ট্রাকিয়ার অন্তঃস্থ গহ্বর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হয়। এ গহ্বরে কিছুটা পরপর ইন্টিমা পুরু হয়ে আংটির মতো বলয় গঠন করে। এগুলোর নাম টিনিডিয়া (ctenidia)। টিনিডিয়া থাকায় ট্রাকিয়া কখনও চুপসে যায় না। দেহে ট্রাকিয়া জালিকাকারে বিন্যস্ত থাকলেও প্রধান কয়েকটি নালি অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থ বিন্যস্ত থাকে। এগুলোকে ট্রাকিয়াল কাণ্ড (tractical trunk) বলে। মোট তিনজোড়া অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড দেহের দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত থাকে। যেমন-

একজোড়া পার্শ্বীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড (lateral longitudinal tracheal trunk),
একজোড়া পৃষ্ঠীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড (dorsal longitudinal tracheal trunk) এবং
একজোড়া অক্ষীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড (ventral longitudinal tracheal trunk)
দেহের প্রতিপাশে অবস্থিত পার্শ্বীয় ট্রাকিয়াল কাণ্ড থেকে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয়দিকে কতগুলো অনুগ্রন্থ ট্রাকিয়াল কাণ্ড (transeverse tracheal trunk) সৃষ্টি হয়ে যথাক্রমে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় ট্রাকিয়াল কান্ডকে যুক্ত করে। ট্রাকিয়া সমগ্র দেহে শ্বসনিক গ্যাস পরিবহন করে।

৩. ট্রাকিওল (Tracheole) : ট্রাকিয়া থেকে ট্রাকিওল নামে সুক্ষ্ণ শাখা সৃষ্টি হয়। এগুলো এককোষী নালিকা, মাত্র ১μm ব্যাসবিশিষ্ট, প্রাচীর ইন্টিমা ও টিনিডিয়াবিহীন কিন্তু এগুলোর অভ্যন্তর টিস্যুরসে পূর্ণ থাকে। এ টিস্যুরসই অন্যান্য প্রাণীর রক্তের মতো শ্বসনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। এ রসের মাধ্যমে দেহকোষে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে।

৪. বায়ুথলি (Air sac) : ট্রাকিয়ার কিছু শাখা প্রসারিত হয়ে বড় ইন্টিমাবিহীন ও পাতলা প্রাচীরযুক্ত বায়ুথলি গঠন করে। এসব থলিতে বাতাস জমা থাকে এবং শ্বসনের সময় বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

শ্বসন পদ্ধতিঃ শ্বাসরঞ্জক না থাকায় ঘাসফড়িং-এর রক্ত শ্বসনে তেমন ভূমিকা পালন করতে পারে না। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জালিকার মতো ছড়িয়ে থাকা ট্রাকিয়া ও ট্রাকিওলের মাধ্যমে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে। শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ উভয় প্রক্রিয়া প্রধানত শ্বাসবন্ধ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। পেশির কার্যকারিতায় উদূরের ছন্দময় সংকোচন-প্রসারণের ফলে বায়ু (O2) দেহে প্রবেশ করে এবং ট্রাকিয়ালতন্ত্র থেকে বায়ু (CO2) বেরিয়ে আসে। এই

ক. শ্বাসগ্রহণ বা প্রশ্বাস (Inspiration) : পেশির প্রসারণে উদরীয় খণ্ডকগুলো প্রসারিত হলে ট্রাকিয়ার অন্তঃস্থ গহ্বরেও আয়তনে বৃদ্ধি পায়। এ সময় প্রথম চারজোড়া শ্বাসরন্ধ্র অর্থাৎ প্রশ্বাসী শ্বাসরন্ধ্রগুলো (inhalatory - spiracle) খুলে যায় ফলে O2 যুক্ত বায়ু প্রথমে শ্বাসরন্ধ্রের মাধ্যমে ট্রাকিয়ায় পৌঁছে, পরে সেখান থেকে ট্রাকিওল (টিস্যুরসে দ্রবীভূত হয়) ও বায়ুথলির মাধ্যমে অন্তঃকোষীয় স্থানে পৌঁছায়।

খ. শ্বাসত্যাগ বা নিঃশ্বাস (Expiration) : দেহকোষে বিপাকের ফলে সৃষ্ট CO2 ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বায়ুথলি ও ট্রাকিওল হয়ে ট্রাকিয়ায় প্রবেশ করে। এসময় পেশির সংকোচনে উদরীয় খণ্ডকগুলো সংকুচিত হলে ট্রাকিয়ার অন্তঃস্থ গহ্বরের আয়তন কমে যায় এবং বাকি ছয়জোড়া শ্বাসরন্ধ্র অর্থাৎ নিঃশ্বাসী শ্বাসবন্ধুগুলো (exhalatory spiracle) খুলে যায়। ফলে ট্রাকিয়ায় অবস্থিত CO2 সজোরে শ্বাসরন্ধ্র পথে বাইরে নির্গত হয়।

Content added || updated By
স্পাইরাকল ও ট্রাকিয়া দিয়ে
স্পাইরাকল এবং মালপিজিয়ান নাীকা দিয়ে
ফুসফুস ও ট্রাকিয়া দিয়ে
ট্রাকিয়া এবং ফ্যাটবডি দিয়ে

ঘাসফড়িং এর রেচনতন্ত্রঃ আমিষজাতীয় খাদ্য বিপাকে সৃষ্ট নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের প্রক্রিয়ার্কে রেচন (excretion) বলে। 
রেচন তন্ত্র (Excretory System ) অন্যসব পতঙ্গের মতো ঘাসফড়িং-এর প্রধান রেচন অঙ্গ ও ম্যাসপিজিয়ান নালিকা (malpighian tubule)। তবে কিছু কোষ অর্থাৎ ইউরেট কোষ, ইউরিকোজ গ্রন্থি, নেফোসাইট এবং কিউটিকল অতিরিক্ত রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

নামকরণ: Marvello Malpighi | 1628-1694) নামক এক ইতালীয় চিকিৎসক ও জীববিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ১৬৬৯ সালে এ নালিকা আবিষ্কার করলে তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়।

অবস্থান: মধ্য ও পশ্চাৎ- পৌষ্টিকনালির সংযোগস্থলে অসংখ্য সুতার মতো ম্যালপিজিয়ান নালিকা হিমোসিলে থাকে। এগুলোর মুক্ত প্রাপ্ত বন্ধ এবং হিমোসিল গহ্বরে হিমোলিখের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। অন্যপ্রান্ত পৌষ্টিকনালি র গহ্বরে উন্মুক্ত।


গঠনঃ ম্যালপিজিয়ান নালিকা একস্তরবিশিষ্ট এপিথেলিয়াম কোষে গঠিত। বাইরের দিকে একটি বেসমেন্ট পর্দা (basement membrane) - এবং ভিতরের দিকে অসংখ্য মাইক্রোভিলাই (microvilli) দিয়ে আবৃত। মাইলো ওলাই বলা সম্মিলিতভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্রাশ কার (brush border) গঠন করে নালিকাগুলো নিজে অতটা নড়নক্ষম নয় বরং হিমোসিলে হিমোলিক্ষের আন্দোলনে এরা রেচন সম্পন্ন করে।

রেচন প্রক্রিয়া : ম্যালপিজিয়ান নালিকার বন্ধ প্রান্ত হিমোলিম্ফে ভাসমান অবস্থায় থেকে রক্ত হতে পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। অতঃপর পটাসিয়াম ইউরেট নালিকার কোষের মধ্যে পানি ডাইঅক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে, পটাসিয়াম বাই-কার্বনেট ও ইউরিক এসিড তৈরি করে। পটাসিয়াম বাইকার্বনেট ও পানি পুনঃশোষিত হয়ে হিমোলিক্ষে ফিরে আসে। কিন্তু ইউরিক এসিড নালিকার গহ্বর বা লুমেন (lumen)-এ থেকে এই ইউরিক এসিড সিলিয়ার আন্দোলনের ফলে ম্যালপিজিয়ান নালিকার গোড়ার অংশ হয়ে পৌষ্টিকনালিতে প্রবেশ করে এবং পশ্চাৎঅস্ত্রে গমন করে। মলাশয়ে অবস্থানকালে- ইউরিক এসিড থেকে অতিরিক্ত পানি পরিশোষণের ফলে বিশুষ্ক ইউরিক এসিড দানী হিসাবে মলের সাথে বেরিয়ে যায়।

অতিরিক্ত বা আনুষাঙ্গিক রেচন অঙ্গ (Accessory Excretory Organ)

১. ফ্যাটবডি কোষ (Fatbody cell) : হিমোসিলের অধিকাংশ স্থান জুড়ে মেদপুঞ্জ বা ফ্যাটবডি থাকে। কয়েক ধরনের কোষ থাকলেও ইউরেট কোষ (urate cell) হিমোসিল থেকে রেচন দ্রব্য শোষণ করে আজীবন এতেকোষাভান্তরে জমা রাখতে সক্ষম।

২. ইউরিকোজ গ্রন্থি (Uricose glands) : পুরুষ ঘাসফড়িংয়ের মাশরুম গ্রন্থিতে ইউরিকোজ গ্রন্থি অবস্থান করার হিমোসিল থেকে রেচন দ্রব্য শোষণ করে ইউরিক এসিডরূপে জমা করে। সংগমের সময় এসব বর্জ্য শুক্রাণুর সাথে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।

৩. নেফ্রোসাইট (Nephrocyte) : পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে হৃদ্যন্ত্রের পার্শ্বদেশে অবস্থিত নেফ্রোসাইট রেচন দ্রব্য সংগ্রহ করে রক্তের মাধ্যমে নিষ্কাশন করে।

৪. কিউটিকল (Cuticle) : লিম্ফ দশায় হিমোসিলে ভাসমান অ্যামিবা সদৃশ কিছু অ্যামিবোসাইট কোষ রক্ত থেকে রেচন দ্রব্য সংগ্রহ করে কিউটিকলের নিচে সঞ্চয় করে। খোলস মোচনের সময় পুরাতন কিউটিকলসহ সঞ্চিত রেচন দ্রব্য পরিত্যক্ত হয়।

Content added || updated By
রক্ত থেকে আলট্রাফিলট্রেশনের মাধ্যমে রেচন দ্রব্যসহ অনেক প্রয়োজনীয় বস্তু প্রক্সিমাল প্যাঁচানো নালিকায় প্রেরণ করে
নালিকার এক প্রান্ত মেসনটেরনের এবং পশ্চাৎ খাদ্যনালীর সংযোগস্থলে সংযুক্ত , অন্যপ্রান্ত হিমোসিলে ভাসমান থাকে
ইহা আরশোলার রেচন অঙ্গ
এদের সংখ্যা 60-100 টি

ঘাসফড়িংয়ের পুঞ্জাক্ষি (Compound eye):
ঘাসফড়িংয়ের মস্তকের উভয় পাশে কালাে, বৃন্তহীন, বৃক্কাকার, উত্তল গঠনকে পুঞ্জাক্ষি বলে।
প্রতিটি পুঞ্জাক্ষি প্রায় ১২০০ থেকে ১৮০০ টি দর্শন একক বা ওমাটিডিয়াম (Ommatidium) নিয়ে গঠিত। পুঞ্জাক্ষিতে অবস্থিত প্রতিটি ওমাটিডিয়ামের গঠন কার্যপদ্ধতি একই রকম।

ওমাটিডিয়ামের গঠনঃ
স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিবিম্ব গঠনে সক্ষম পুঞ্জাক্ষির প্রতিটি সরলাক্ষি বা দর্শন একক বা একক আলােক সংবেদী অঙ্গকে ওমাটিডিয়াম বলে।
একটি ওমাটিডিয়াম ১০টি অংশ নিয়ে গঠিত। নিচে ঘাসফড়িংয়ের ওমাটিডিয়ামের গঠন বর্ণনা করা হলাে-

১। কর্নিয়া (Cornea)
এটি ওমাটিডিয়ামের বাহিরের দিকে অবস্থিত। এটি কিউটিকল নির্মিত ছয়কোণ বিশিষ্ট স্বচ্ছ আবরণ ।

কাজঃ কর্নিয়া লেন্সের মতাে কাজ করে ।

২। কর্নিয়াজেন কোষ (Corneagen cell)
কর্নিয়ার ঠিক নিচে একজোড়া কর্নিয়াজেন কোষ পাশাপাশি অবস্থান করে।

কাজঃ পুরাতন কর্নিয়া পরিত্যক্ত হলে এদের নিঃসৃত রসে নতুন কর্নিয়া সৃষ্টি হয় ।

৩। ক্রিষ্টালাইন কোণকোষ (Crystaline cone cell)
এগুলাে কর্নিয়াজেন কোষের নিচে অবস্থিত, লম্বা চারটি কোষ। এরা ক্রিষ্টালাইন কোণকে ঘিরে রাখে।

কাজঃ এসব কোষের নিঃসৃত রস দিয়ে ক্রিষ্টালাইন কোণ গঠিত হয় ।

৪। ক্রিস্টালাইন কোণ (Crystaline cone)
ক্রিস্টালাইন কোণকোষগুলাে দিয়ে পরিবেষ্টিত স্বচ্ছ, মােচাকৃতির অংশকে ক্রিস্টালাইন কোণ বলে।

কাজঃ এর মাধ্যমে আলােক রশ্মি প্রতিসরিত হয় ।

৫। আইরিশ রঞ্জক আবরণ (Iris pigment sheath)
কর্নিয়াজেন কোষ ও ক্রিস্টালাইন কোণ কোষগুলাে একটি । কালাে রঙের আবরণী দিয়ে আবৃত থাকে। একে আইরিশ রঞ্জক আবরণ বলে। তীব্র আলােকে এই আবরণী । প্রসারিত হয়ে কোণ কোষগুলােকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করে। আবার মৃদু আলোকে সংকুচিত হয়ে কোণ কোষগুলােকে আংশিক মুক্ত রেখে প্রতিবিম্ব গঠনকে প্রভাবিত করে।

৬। রেটিনুলার কোষ (Retinular cell)
এরা আকারে লম্বা এবং সংখ্যায় সাতটি। এদের নিউক্লিয়াস অগ্রপ্রান্তে অবস্থিত। এরা ক্রিস্টালাইন কোণ কোষের নিচে বৃত্তাকারে সাজানাে থাকে।

কাজঃ এদের নিঃসৃত রসে র্যাবড়ােম গঠিত হয়।

৭। র‍্যাবডোম (Rhabdom)
এটি রেটিনুলার কোষগুলাের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত লম্বা দণ্ডের মতাে অংশ । রেটিনুলার কোষ নিঃসৃত রসেই এটি গঠিত ।

কাজঃ  র‍্যাবডম প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় ।

৮। রেটিনাল সিথ (Retinal sheath)
এরা রঞ্জক কোষযুক্ত কালাে পর্দার আবরণী । এরা আইরিশ কোষের গােড়াকে এবং রেটিনুলার কোষকে বেষ্টন করে রাখে।

কাজঃ একটি ওমাটিডিয়ামকে তার পার্শ্ববর্তী ওমাটিডিয়াম থেকে পৃথক রাখে ।

৯। ভিত্তি পর্দা (Basal membrane)
ওমাটিডিয়াম যে পাতলা পর্দার ওপর অবস্থান করে তাকে ভিত্তি পর্দা বলে।

কাজঃ এটি ওমাটিডিয়াকে ধারণ করে।

১০। স্নায়ুতন্তু (Nerve fibre)
প্রতিটি রেটিনুলার কোষ থেকে স্নায়ুতন্তু বের হয়ে অপটিক স্নায়ুর সাথে যুক্ত থাকে।

কাজঃ এরা ওমাটিডিয়ামে সৃষ্ট প্রতিবিম্বকে মস্তিষ্ককে প্রেরণ করে ।

Content added By
প্রায় এক হাজার
প্রায় দুই হাজার
প্রায় তিন হাজার
প্রায় চার হাজার
প্রায় পাঁচ হাজার

আলোর তীব্রতা অনুসারে পুঞ্জাক্ষীতে ২ ধরনের প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়। যথাঃ

১. অ্যাপোজিশন প্রতিবিম্ব (Apposition image): 
উজ্জ্বল আলোকে ঘাসফড়িং এর প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতিকে এপপাজিশন বা মোজাইক প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতিবলে। এই পদ্ধতিতে গঠিত প্রতিবিম্বকে অ্যাপোজিশন প্রতিবিম্ব বা মোজাইক প্রতিবিম্ব বলে।

প্রক্রিয়া
এ সময় ওমাটিডিয়ামের আইরিস পিগমেন্ট আবরণ প্রসারিত হয়ে র্যাবডোমগুলোকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করে। ফলে প্রতিটি ওমাটিডিয়াম পরস্পর হতে পৃথক হয়ে যায়। বস্তুর অংশ বিশেষ হতে আগত উলম্ব আলোকরশ্মিগুলো ওমাটিডিয়ামে প্রবেশ করে এবং যথাক্রমে কর্ণিয়া ও ক্রিস্টালাইন কোণ  হয়ে র‍্যাবডোমে প্রবেশ করে। কিন্তু তীর্ষক আলোকরশ্মিগুলো কর্ণিয়ার মাধ্যমে প্রবেশ করলেও আইরিশ পিগমেন্ট আবরণ দ্বারা শোষিত হয়। ফলে প্রতিটি ওমাটিডিয়ামে পৃথক পৃথক প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। এভাবে কয়েকটি ওমাটিডিয়াম একত্রে কোন বস্তুর আংশিক বা সম্পূর্ণ ও স্পষ্ট প্রতিবিম্ব গঠন করে। দিনের বেলা বা যে কোন সময় উজ্জল আলোতে এ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন প্রতিবিম্ব খুবই স্পষ্ট কিন্তু খন্ডিত হয়। এই প্রতিবিম্বকে মোজাইক প্রতিবিম্ব বা অ্যাপোজিশন প্রতিবিম্ব বলে।

২. সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব (Superposition image):
স্তিমিত বা মৃদু আলোতে আরশোলার প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতিকে সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব গঠন পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতিতে গঠিত প্রতিবিম্বকে সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব (Super Position) বলে।

প্রক্রিয়া 
স্থিমিত বা মৃদু আলোকে ওমাটিডিয়ামের আইরিস পিগমেন্ট আবরণ কর্ণিয়ার দিকে এবং রেটিনুলার সীথ নীচের দিকে সংকুচিত হয়। ফলে র‍্যাবডোমের নীচের অংশ ও রেটিনুলার কোষের উপরের অংশ অনাবৃত হয়। বস্তু থেকে আগত উলম্ব আলোক রশ্মিগুলো এদের বরাবর অবস্থিত ওমাটিডিয়ামগুলোর কর্ণিয়া ও মোচার মধ্য দিয়ে র‍্যাবডোমে পৌছায়। কিন্তু তীর্যক রশ্মিগুলো কোন নির্দিষ্ট ওমাটিডিয়ামের কর্ণিয়ার মধ্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী ওমাটিডিয়ামসমূহে প্রবেশ করে। ফলে কোন একটা ওমাটিডিয়ামের র‍্যাবডোমে বস্তুর একাধিক বিন্দু থেকে আগত আলোকরশ্মি পতিত হয় এবং সম্মিলিতভাবে একটি সামগ্রিক, অস্পষ্ট, ও ঝাপ্সা  প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। সাধারণতঃ রাতে বা যে কোন সময় স্তিমিত আলোতে ঘাসফড়িং এ প্রক্রিয়ায় দেখে। স্তিমিত আলোকে এই দর্শন প্রক্রিয়াকে সুপারপজিশন দর্শন বলে।

Content added || updated By
বাইনোকুলার প্রতিবিম্ব
সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব
অ্যাপোজিশন প্রতিবিম্ব
মনোকুলার প্রতিবিম্ব

ঘাসফড়িং এর প্রজননতন্ত্র

ঘাসফড়িং–এর প্রজননতন্ত্রঃ

ঘাসফড়িং একলিঙ্গ প্রাণী। পুরুষ হতে স্ত্রী ঘাসফড়িংকে তাদের ওভিপোজিটর (ovipositor) এবং উদরের পশ্চাৎ অংশ দেখে সহজেই সনাক্ত করা যায়।

ঘাসফড়িং এর পুং প্রজনন তন্ত্রঃ

একজোড়া শুক্রাশয় (testis, pl. testes) পুং প্রজনন তন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। শুক্রাশয় ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম উদরীয় খন্ডকে অন্ত্রের উপরে অবস্থান করে। একটি মিডিয়ান লিগামেন্ট দ্বারা শুক্রাশয় পৃষ্ঠীয় প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। প্রতিটি শুক্রাশয় ধারাবাহিকভাবে সজ্জিত লম্বাটে ক্ষুদ্র ফলিকল সমন্বয়ে গঠিত। শুক্রাশয়ে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় এবং তা শুক্রাশয় হতে অঙ্কীয় পার্শ্বীয় দিকে উত্থিত ভাস ডিফারেন্স (vas deferens) এ প্রবেশ করে। প্রতিটি ক্রাশয় হতে উত্থিত ভাস ডিফারেন্স নবম উদরীয় খন্ডে অন্ত্রের নিচে মিলিত হয়ে মধ্যরেখা বরাবর পেশিবহুল ক্ষেপন নালি (ejaculatony duct) গঠন করে। ভাস ডিফারেন্স এর শেষাংশ স্ফীত এবং সেমিনাল ভেসিকল (seminal vesicle) নামে পরিচিত। সেমিনাল ভেসিকল শুক্রাণু (spermatozoa) সঞ্চিত রাখে। একজোড়া সহায়ক গ্রন্থি (accessory glands) বা মাশরুম গ্রন্থি (mushroom glands) ক্ষেপন নালিতে উন্মুক্ত হয়। মাশরুম গ্রন্থি নিঃসৃত তরল পদার্থ শুক্রাণু স্থানান্তকরণে (স্ত্রী ঘাস ফড়িং-এ) সহায়তা করে। ক্ষেপন নালি পেনিস (penis) বা ইডেগাস (aedegus) এ উন্মুক্ত হয়।

ঘাসফড়িং এর স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রঃ

স্ত্রী ঘাসফড়িং এ একজোড়া ডিম্বাশয় থাকে যা অন্ত্রের উপরে মিডিয়ান লিগামেন্ট (median ligament) দ্বারা পৃষ্ঠীয় প্রাচীরের সাথে আটকানো থাকে। প্রতিটি ডিম্বাশয় (ovary) লম্বাটে এবং ক্রমান্বয়ে সরু বেশ কতকগুলো ওভারিওলস (ovarioles) বা অণুডিম্বাশয় দ্বারা গঠিত। প্রতিটি ওভারিওল সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত বর্ধনশীল ডিম্বক বহন করে। ডিম্বনালি দুইটি একত্রিত হয়ে একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ গঠন করে। একে যোনি (vagina) বলে। যোনি ওভিপজিটরের (ovipositor) মাধ্যমে বাহিরে উন্মুক্ত হয়। যোনির অদূরে অবস্থিত স্পার্মাথিকা (spermtheca) বা সেমিনাল রিসেপ্টেকল (secminal receptacle) হতে স্বতন্ত্র নালি যোনিতে উন্মুক্ত হয়। যোনির সাথে সংযুক্ত সহায়ক গ্রন্থি (accessory gland)কে কোল্যাটেরিয়াল গ্রন্থি (colleterial gland) বলে। কোল্যাটেরিয়াল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস সিমেন্ট জাতীয় পদার্থ ডিম পাড়ার পর ডিমগুলোকে একত্রে রাখতে সহায়তা করে। স্পার্মাথিকায় শুক্রাণু সঞ্চিত থাকে। 

 

Content added By
তেলাপোকার পুং জননতন্ত্রের অংশ
তেলাপোকার স্ত্রী জননতন্ত্রের অংশ এবং এতে মাত্র একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু থাকে।
তেলাপোকার স্ত্রী জননতন্ত্রের অংশ এবং এতে মাত্র একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু থাকে।
তেলাপোকার স্ত্রী জননতন্ত্রের অংশ এবং এতে অনিষিক্ত ডিম্বাণু থাকে ।
লাইপেজ প্রোটিন জাতীয় খদ্যকে ফ্যাটি এসিড গ্লিসারল এ পরিণত করে
অ্যানিলিডার প্রধান রেচন অঙ্গ মালপিজিয়ান নালিকা
যে পোষকদেহে একটি পরজীবীকে প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যায়, তাকে অসমসত্ব পোষক বলে
পুরুষ অারশোলার নবম খণ্ডকে অঙ্কীয়দেশে একজোড়া অ্যানাল স্টইল থাকে

রূপান্তর (Metamorphosis)

"পতঙ্গের ভূণ যখন কয়েকটি ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দশা প্রাপ্ত হয় তখন এ ধরনের ভ্রূণোত্তর পরিস্ফুটনকে রূপান্তর বলে। রূপান্তর প্রধানত দুধরনের- ১। অসম্পূর্ণ ও ২। সম্পূর্ণ রূপান্তর ।

১. অসম্পূর্ণ রূপান্তর (Incomplete metamorphosis) : (যে রূপান্তরে একটি পতঙ্গ ডিম ফুটে বেরিয়ে কয়েকটি নিক্ষ (শিশু)দশা অতিক্রমের পর পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গে পরিণত হয় তাকে অসম্পূর্ণ রূপান্তর বলে। প্রত্যেক নিম্ফ দশা দেখতে প্রায় পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গের ক্ষুদ্র প্রতিরূপের মতো দেখায়, কিন্তু এগুলো ডানা ও জননাঙ্গবিহীন থাকে এবং স্পষ্ট বর্ণপার্থক্য প্রদর্শন করে। অসম্পূর্ণ রূপান্তরের শিশু অবস্থায় প্রাণীকে নিম্ফ (nymph) বলে। উদাহরণ- ঘাসফড়িং ও তেলাপোকার রূপান্তর।

২. সম্পূর্ণ রূপান্তর (Complete metamorphosis) : যে রূপান্তরে শিশু প্রাণী ও পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর মধ্যে কোনো আঙ্গিক মিল থাকে না এবং ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশুপ্রাণী পূর্ণাঙ্গ অবস্থাপ্রাপ্ত হয়, সে ধরনের রূপান্তরকে সম্পূর্ণ রূপান্তর বলে। এ ক্ষেত্রে রূপান্তরের ৪টি সুস্পষ্ট ধাপ হচ্ছে ডিম লার্ভা পিউপা →ইমোগো (পূর্ণাঙ্গ)” সম্পূর্ণ রূপান্তরে শিশু অবস্থায় প্রাণীকে লার্ভা (larva) বলে। উদাহরণ- মৌমাছি ও প্রজাপতির রূপান্তর ।

ঘাসফড়িং-এর রূপান্তর অসম্পূর্ণ বা হেমিমেটাবোলাস (hemimetabolous) ধরনের কারণ এদের অপরিণত নিম্ফ আংশিক পরিস্ফুটনের মাধ্যমে কয়েকটি নিম্ফ দশা পেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ ঘাসফড়িং-য়ে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ ঘাসফড়িংয়ের জীবন ইতিহাসে তিনটি ধাপ রয়েছেঃ ডিম → নিম্ফ পূর্ণাঙ্গ প্রাণী ।

ডিম ফুটে যে তরুণ ঘাসফড়িং বেরিয়ে আসে তাকে নিম্ফ (nymph) বলে )নিম্ফে ডানা ও জননাঙ্গ থাকে না,সদ্য পরিস্ফুটিত নিম্ফের কাইটিন নির্মিত বহিঃকঙ্কাল থাকে স্বচ্ছ, ক্রমশ গাঢ় হয়। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের ও নিম্ফ একটু বড় হলে বহিঃকঙ্কাল আঁটসাট হয়ে দেহবৃদ্ধি রহিত করে দেয়। তখন দেহবৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখতে পুরনে বহিঃকঙ্কাল মোচন বা মোল্টিং (molting) প্রক্রিয়ায় ত্যাগ করে ২য় ধাপের নিম্ফে পরিণত হয় । পরবর্তীতে আরও ৩ বার খোলস মোচনের পর পূর্ণাঙ্গ ঘাসফড়িং-এ রূপান্তরিত হয়। দ্বিতীয় ধাপের নিম্ফে ক্ষুদ্রাকায় ডানা প্যাড (wing pad) থেকে ডানা সৃষ্টির সূত্রপাত ঘটে । প্রতিবার খোলস মোচনের পর নিম্ফ দেখতে পূর্ণাঙ্গ ঘাসফড়িং-এর মতো দেখায়। তা ছাড়া এদের পরিস্ফুটনে কোনো বিশ্রাম দশাও নেই। পঞ্চম বার খোলস মোচনের মাধ্যমে নিম্ফ পরিণত ঘাসফড়িং হয়ে উঠে দুটি মোচনের মধ্যবর্তী দশাকে ইনস্টার (instar) বলে । ঘাসফড়িং-এর রূপান্তর সম্পন্ন হতে প্রায় দুমাস সময় লাগে।

রূপান্তরে হরমোনের ভূমিকাঃ

ঘাসফড়িং-এর সুষ্ঠু রূপান্তরে বিভিন্ন হরমোনের মিথস্ক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের কিছু অংশে এবং স্নায়ুরজ্জুর গ্যাংগলিয়া বিভিন্ন স্নায়ু-সংবেদী, হরমোন উৎপন্নকারী কোষ বহন করে। এসব কোষ প্রোথোরাসিকোট্রপিক হরমোন (PTTH) উৎপন্ন করে। মস্তিষ্কের পেছনে কর্পোরা অ্যালাটা নামে একজোড়া অংশে স্নায়ু- সংবেদী কোষগুলোর অ্যাক্সন প্রেরিত হয়। কর্পোরা অ্যালাটা PTTH জমা ও ক্ষরণ করে এবং জুভেনাইল হরমোন (juvenile hormone) নামে এক ধরনের হরমোন উৎপন্ন করে। PTTH হিমোলিম্ফের মাধ্যমে প্রোথোরাসিক গ্রন্থিতে বাহিত হয় । এ গ্রন্থি PITH-এর প্রতি সাড়া দিয়ে একডাইসন (ccdysone) বা মোচন হরমোন (molting hormone) উৎপন্ন করে। একভাইসনের প্রভাবে মোচন ক্রিয়া শুরু হয় এবং পুরনো কিউটিকল মোচিত হয় (এ প্রক্রিয়ার নাম একডাইসিস)

Content added || updated By
হলোমেটাবোলাস
হেটারোবোলাস
হেমিমেটাবোলাস
স্যুডোমেটাবোলাস

প্রতীক প্রাণী : রুই মাছ (Labeo rohita)

বাংলাদেশের তিনটি (রুই, কাতলা ও মৃগেল) বড় কার্প জাতীয় প্রজাতির মধ্যে রুই মাছ (Labeo rohita) । স্বাদুপানির চাষযোগ্য, সুলভ, জনপ্রিয় ও প্রোটিন সমৃদ্ধ সুস্বাদু মাছ। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল মাছ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় খামারে বছরে ৩৫-৪৫ সেন্টিমিটার (১-১.৫ ফুট) লম্বা, ৭০০- ৮০০ গ্রাম ওজনবিশিষ্ট হয় । কিন্তু হালদা নদীর রুইয়ের পোনার বৃদ্ধি ২-২ কেজি পর্যন্ত বাড়ে।

বসতি (Habitat) : রুই মাছ ইন্ডিয়া (মূল ভূখন্ড), পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের নদীতন্ত্রের প্রাকৃতিক প্রজাতি। স্বাদুপানির পুকুর, নদী, হ্রদ ও মোহনায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন বড় নদীতে বিচরণ করে, ডিম ছাড়ার সময় প্লাবনভূমিতে প্রবেশ করে। স্বাদ, সহজ চাষপদ্ধতি ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে ও পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে শ্রীলংকা, নেপাল, চায়না, রাশিয়ান ফেডারেশন, জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে রুই মাছের চাষ হচ্ছে। ইন্ডিয়ান আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মিঠাপানির নদীতেও অনুপ্রবেশিত রুইয়ের সফল চাষ হচ্ছে।

স্বভাব (Habit) : জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে রুইয়ের পছন্দের আহার হচ্ছে প্ল্যাংকটন জাতীয় (প্রাণিপ্ল্যাংকটন ও উদ্ভিদপ্ল্যাংকটন) জীব।  আঙ্গুলী দশায় প্রাণিপ্ল্যাংকটন গ্রহণ করলেও ডেসমিড, ফাইটোফ্ল্যাজেলেট (phytoflagellate), শৈবাল রেণু (algal spore) প্রভৃতিও গ্রহণ করে । তরুণ ও পূর্ণবয়স্ক মাছ পানির মাঝ স্তরের শৈবাল ও নিমজ্জিত উদ্ভিদ বেশি গ্রহণ করে (অর্থাৎ প্রধানত শাকাশী)। পৌষ্টিকনালিতে পচনশীল জৈব পদার্থ ও বালু, কাদা প্রভৃতি দেখে তলদেশি খাদকও মনে হয় খুঁটে খাওয়ার উপযোগী নরম ঝালরযুক্ত ঠোঁট এবং মুখ-গলবিলীয় অঞ্চলে দাঁতের বদলে সব রোগ ধারাল কর্তন আল (edge) দেখে বোঝা যায় রুই মাছ নরম জলজ উদ্ভিদ আহার করে। ফুলকায় সরু চুলের মতো ফুলকা-রেকার (gill-raker) দেখে প্রমাণ পাওয়া যায় এ মাছ অতিক্ষুদ্র প্ল্যাংকটনও ছেঁকে খায় । মাছের পোনাগুলো ঝাঁক বেঁধে চলে, বয়স্ক মাছ পৃথক জীবন অতিবাহিত করে। রুই মাছ ১৪° সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না।

Content added || updated By
অ্যারোসিথাল
মাইক্রোলোসিথাল
মেসোলোসিথাল
পলিলেসিথাল

রুই মাছের শ্রেণিবিন্যাস

রুই মাছের শ্রেণিতাত্ত্বিক অবস্থানঃ

Phylum : Chordata

  Sub-Phylum : Vertebrata

     Class: Actinopterygii

        Order: Cypriniformes

            Family: Cyprinidae

                Genus: Labeo

                    Species: Labeo rohita

Content added By


রুই মাছের বাহ্যিক গঠনঃ রুই (Labeo rohita) একটি অস্থিময় মাছ। এর দেহ অনেকটা মাকু আকৃতির অর্থাৎ মধ্যভাগ চওড়া ও দুই প্রান্ত ক্রমশ সরু। প্রস্থ অপেক্ষা উচ্চতা বেশি, প্রস্থচ্ছেদ ডিম্বাকার। রুই মাছ চলনের সময় পানির ভিতর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় না, তাই এ ধরনের আকৃতিকে স্ট্রিমলাইন্ড (streamlined) বলে। একটি রুই মাছ সর্বোচ্চ ২০০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং ওজন সাধারণত ৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। রুই মাছের দেহ তিন অংশে বিভক্ত, যথা-


ক. মাথা (Head):
এই মাছের দেহের অগ্রপ্রান্ত থেকে কানকোর পশ্চাৎপ্রান্ত পর্যন্ত অংশটি মাথা, যা ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা ও পৃষ্ঠভাগ উত্তল কিন্তু উদর থেকে মস্তকের উপরিভাগ বেশি উত্তল।তুণ্ড (snout) হচ্ছে নাক, মুখ এবং চোয়াল সমন্বিত মুখের বর্ধিত অংশ, এটি ভোঁতা, নিচু, কিন্তু চোয়ালের সামনে বাড়ানো এবং কোনো পার্শ্বীয় খণ্ডবিহীন। এই মাছের রয়েছে অর্ধচন্দ্রাকার মুখ, যা নিচের দিকে উপপ্রান্তীয়ভাবে অবস্থিত ও মোটা ঝালরের মতো ঊর্ধ্ব, আড়াআড়ি বিস্তৃত ও নিম্নোষ্ঠ আবৃত। এর ঊর্ধ্বচোয়ালের পিঠের দিকে একজোড়া নরম ও ছোট ম্যাক্সিলারি বার্বেল (maxillary barbels) রয়েছে। মাছের তুণ্ডের পৃষ্ঠদেশে দুচোখের একটু সামনে রয়েছে একজোড়া নাসারন্ধ্র (nostrils)। এদের প্রত্যেক নাসারন্ধ্রের পেছনে এবং মাথার দুপাশে একটি করে বড় গোল চোখ রয়েছে। চোখে পাতা থাকে না, কিন্তু কর্ণিয়া স্বচ্ছ ত্বকীয় আবরণে আবৃত। এর মাথা আঁইশবিহীন দেহকাণ্ড ও লেজ মিউকাসময় সাইক্লয়েড (cycloid) আঁইশে আবৃত।

মুখ: এই মাছের মুখ নিচের দিকে অবস্থিত, মুখের দুই কোনা পিছনের দিকে বাঁকা হওয়াতে মুখ অর্ধচন্দ্রাকার এবং থুঁতনি ভোঁতা, নিচু, কদাচিৎ স্ফীত। মুখের নিচে ও উপরে ঝালরের মত ঠোঁট আছে। থুঁতনির পৃষ্ঠদেশের চোখের সামান্য সম্মুখে একজোড়া নাসারন্ধ্র আছে।
চোখ: মাথার দুই পাশে ১ টি করে মোট ২ টি বড় বড় চোখ আছে। চোখে কোন পাতা নেই, কর্নিয়া স্বচ্ছ চামড়ার আবরণ দ্বারা আবৃত।

খ. দেহকান্ড (Trunk):
কানকোর শেষ ভাগ থেকে পায়ু পর্যন্ত দেহের মধ্য অংশটি দেহকাণ্ড। এ অংশটি চওড়া এবং বিভিন্ন ধরনের পাখনা (fin) বহন করে। পাখনাগুলো পূর্ণ বিকশিত এবং অস্থিময় পাখনা-রশ্মি (fin rays) যুক্ত। দেহকান্ডের পশ্চাৎপ্রান্তের অঙ্কীয় দিকে ঠিক মাঝ বরাবর তিনটি ছোট ছিদ্র থাকে: প্রথমে পায়ুছিদ্র, মাঝে জননছিদ্র এবং সবশেষে রেচনছিদ্র।

রুই মাছের পাখনাসমূহ (Fins):
মাছের চলনাঙ্গকে পাখনা বলে। পাখনা সাধারণত চাপা ও পাখনা-রশ্মিযুক্ত। পাখনার ভিতরে অবস্থিত সমান্তরালভাবে সজ্জিত সূক্ষ্ম শলাকার অস্তঃকঙ্কালকে পাখনা রশ্মি (fin rays) বলে। রুই মাছে মোট পাঁচ ধরনের পাখনা দেখা যায়-

পৃষ্ঠপাখনা (Dorsal fin) : এই মাছের দেহকাণ্ডের মাঝ বরাবরের পিছনে বড়, কিছুটা রম্বস আকারের একটি মাত্র পৃষ্ঠ পাখনা রয়েছে । এর উপরের দিকের মধ্যভাগ অবতল এবং এখানে ১৪-১৬টি পাখনা-রশ্মি থাকে।

বক্ষ-পাখনা (Pectoral fin) : কানকোর ঠিক পেছনে দেহকান্ডের সম্মুখ পার্শ্বদিকে একজোড়া বক্ষ-পাখনা আছে। এবং প্রত্যেক পাখনাতে ১৭-১৮টি পাখনা রশ্নিযুক্ত থাকে।

শ্রোণি-পাখনা (Pelvic fin) : বক্ষপাখনার সামান্য পেছনে একজোড়া শ্রোণি পাখনা অবস্থিত এবং এটি ৯টি করে পাখনা-রশ্মিযুক্ত।

পায়ু-পাখনা (Anal fin) : পায়ুর ঠিক পিছনে দেহের অঙ্কীয়দেশের মধ্যরেখা বরাবর একটি পায়ু-পাখনা থাকে। এটি ৬-৭টি পাখনা-রশ্মিযুক্ত।

পুচ্ছপাখনা (Caudal fin) : লেজের পশ্চাতে অবস্থিত পাখনাটি পুচ্ছ-পাখনা। এতে আছে ১৯টি পাখনা-রশ্মি। পুচ্ছ-পাখনা রুই মাছের চলাচলে এবং অন্যান্য পাখনা দেহের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে। দেহের দু’পাশে এক সারি ছোট গর্ত আছে যা আঁইশের নিচে অবস্থিত একটি লম্বা খাদের সঙ্গে যুক্ত। এ খাদ ও গর্তের সমন্বয়ে মাছের পার্শ্বরেখা অঙ্গ (lateral line organ) গঠিত হয়। এতে অবস্থিত সংবেদী কোষ পানির তরঙ্গ থেকে পানির গুণাগুণ সংক্রান্ত রাসায়নিক সংবেদ গ্রহণ করে।

গ. লেজ (Tail) :
পায়ুর পরবর্তী অংশটি লেজ। এর শীর্ষে রয়েছে হোমোসার্কাল (homocercal) ধরনের পুচ্ছ-পাখনা। এটি উল্লম্বতলে (vertical plane) প্রসারিত এবং পিছনে, উপরে ও নিচে দুটি প্রতিসম বাহ্যিক খণ্ডে বিভক্ত। ডার্মাল রশ্মিগুলো উপরে ও নিচের খণ্ডে বড়, মাঝখানে ছোট।

রুই মাছের আঁইশের বৈশিষ্ট্য (Scales):

• রুই মাছের দেহকাণ্ড ও লেজ মিউকাসময় 
• সাইক্লয়েড (cycloid) ধরনের (কারণ গোলাকৃতি) আঁইশ দ্বারা আবৃত।
• আঁইশ পাতলা, প্রায় গোল ও রূপালি চকচকে হয়ে থাকে।
• পৃষ্ঠদেশীয় আঁইশের কেন্দ্র লালচে প্রান্ত কালো রংয়ের হয় এবং কেন্দ্রটি লালচে রং জনন ঋতুতে আরও গাঢ় ও উজ্জ্বল হয়।  এছাড়াও জলচর উদ্ভিদসমৃদ্ধ পরিবেশের এর পৃষ্ঠদেশের রং লালচে-সবুজ হতে পারে।
• এখানে আঁইশে এককেন্দ্রিক বৃত্তাকার স্তরে স্তরে অস্থি-উপাদান  জমা হওয়ার কারণে আঁইশের উপরের অংশে বৃত্তাকার উঁচু  আল ও নিচু খাদ সৃষ্টি হয়। এই স্তরগুলোর কেন্দ্রটিকে ফোকাস (focus) বলে। এটি সাধারণত একপাশে থাকে।
• উঁচু আলগুলোকে সার্কুলাস (বহুবচনে সার্কুলি) বা বৃদ্ধিরেখা বলে। এগুলোর সাহায্যে বাৎসরিক বৃদ্ধির এবং বিভিন্ন ঋতুতে বৃদ্ধি সম্বন্ধে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যায়।
• রুই মাছের আঁইশের বৃদ্ধি সাধারণত বসন্তকালে ও গ্রীষ্মে বেশি হয়। 
• আঁইশের সম্মুখভাগ তন্তুময় যোজক টিস্যু-নির্মিত এবং ডার্মিসের পকেটের মধ্যে প্রবিষ্ট থাকে। পশ্চাৎভাগ ডেন্টিন- নির্মিত ও উন্মুক্ত। 
• স্পষ্ট বৃদ্ধিরেখা ও অনেক রঞ্জক কোষ এই উন্মুক্ত অংশে থাকে। এছাড়া এই আঁইশগুলো পরস্পরকে আংশিক ঢেকে লম্বালম্বি ও কোণাকুণি সারিতে বিন্যস্ত থাকে।
• আঁইশগুলো সবসময় মিউকাসের পাতলা পিচ্ছিল আস্তরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এবং এর মাথার দুই পাশে ৪ জোড়া ফুলকা রয়েছে 

Content added By
গ্যানয়েড আঁইশ
সাইক্লয়েড আঁইশ
প্ল্যাকয়েড আঁইশ
টিনয়েড আঁইশ

রুই মাছের রক্ত সংবহনতন্ত্র

Labeo rohita-র রক্ত সংবহনতন্ত্রঃ

রক্তবাহিকা সমৃদ্ধ এবং হৃৎপিণ্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত যে তন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয় তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। রুই মাছের রক্ত লাল। এটি রক্তরস (plasma) ও রক্তকণিকা (blood corpuscles) নিয়ে গঠিত। রক্তকণিকা দুধরনের-লোহিতকণিকা ও শ্বেতকণিকা। লোহিতকণিকা প্রায় ডিম্বাকার ও নিউক্লিয়াসযুক্ত। শ্বেতকণিকগুলো দেখতে অ্যামিবার মতো (amochoid)। 

হৃৎপিণ্ড, ধমনি, শিরা ও কৈশিকনালির সমন্বয়ে Labeo-র রক্ত সংবহনতন্ত্র গঠিত। 

Content added || updated By
বাল্বাস আর্টারিওসাস
কোনাস আর্টারিওসাস
সাইনাস ভেনোসাস
পেরিকার্ডিয়াম

রুই মাছের হৃৎপিন্ডঃ 
রুই মাছের ফুলকাদুটির পিছনে পেরিকার্ডিয়াল গহবর (pericardial cavity) নামে এক বিশেষ ধরনের গহ্বরে হৃৎপিন্ড অবস্থান করে।
পেরিকার্ডিয়াম (pericardium) নামক আবরণে হৃৎপিন্ডটি আবৃত থাকে।
অন্যান্য মাছের মতে রুই মাছের হৃৎপিন্ডটিও দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট একটি অলিন্দ বা অ্যাট্রিয়াম (atrium) এবং অন্যটি নিলয় বা ভেন্ট্রিকল (ventricle)।
এছাড়া সাইনাস ভেনোসাস (sinus venosus) নামে একটি উপপ্রকোষ্ঠ রয়েছে।


সাইনাস ভেনোসাস: এটি পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট উপপ্রকোষ্ঠ যা হৃৎপিণ্ডের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত এবং সাইনো-অ্যাট্রিয়াল (sino-atrial) ছিদ্রপথে অ্যাট্রিয়ামের সাথে যুক্ত। এ পথে শিরা থেকে সংগৃহীত CO2  সমৃদ্ধ রক্ত অ্যাট্রিয়ামে প্রবেশ করে।
ভেন্ট্রিকল (নিলয়): এটি হৃৎপিন্ডের সর্বশেষ প্রকোষ্ঠ। পেরিকার্ডিয়াল গহ্বরের অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত এ প্রকোষ্ঠটির প্রাচীর পুরু ও মাংসল এবং সম্মুখে বাল্বাস আর্টারিওসাস (bulbus arteriosus)-তে উন্মুক্ত।

বাল্বাস আর্টারিওসাস: রুই মাছের হৃৎপিণ্ডে কোনাস আর্টারিওসাস (conus arteriosus) নেই। তার পরিবর্তে বাল্বাস আর্টারিওসাস নামক একটি গঠন দেখা যায় যা মূলত ডেট্রাল অ্যান্ডর্টার ক্ষীত গৌড়াদেশীয় অংশ। এটি হৃৎপিন্ডের কোন অংশ নয়। এটি হৃৎপিণ্ড থেকে ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টায় রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

রুই মাছের হৃদপিন্ডের কপাটিকাসমূহ (Valves):
হৃৎপিন্ডের উপপ্রকোষ্ঠ প্রকোষ্ঠগুলোর সংযোগ ছিদ্রে কপাটিকা (valve) থাকে। কপাটিকাগুলো শুধু সামনের দিকে খুলে, ফলে রক্তের পশ্চাৎগতি রুদ্ধ হওয়ায় রক্তের প্রবাহ থাকে একমুখী। বিপরীত প্রবাহে কপাটিকাগুলো বাধা দেয়। রুই মাছের হৃৎপিন্ডে নিচে বর্ণিত কপাটিকাগুলো পাওয়া যায়–

সাইনো-অ্যাট্রিয়াল কপাটিকা (sino-atrial valve): সাইনাস ভেনোসাস ও অ্যাট্রিয়ামের মাঝে অবস্থিত ছিদ্রপথে এ কপাটিকা থাকে।

অ্যাট্রিও ভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা (Atrio-ventricular valve): অ্যাট্রিয়াম ও ভেন্ট্রিকলের মাঝে অবস্থিত অ্যাট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রপথে এ কপাটিকা অবস্থান করে।

ভেন্ট্রিকুলো-বাল্বাস কপাটিকা (Ventriculo-bulbus valve): এটি ভেন্ট্রিকল ও বাল্বাস অ্যাওর্টার মাঝে অবস্থিত কপাটিকা।


হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত সংবহন (Blood circulation through heart):
সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড রক্ত পরিবহন করে। কপাটিকাসমূহের নিয়ন্ত্রণের ফলে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলোর মধ্যে রক্ত সংবহনের একমুখিতা দেখা যায় এবং এ ধরনের হৃৎপিণ্ডকে এক চড় হৃৎপিণ্ড (single circuit than) বলে। হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে কেবল CO2-সমৃদ্ধ রক্ত বাহিত হয় বলে রুই মাছের হৃৎপিণ্ডকে ভেনাস হার্ট (venous heart) বা শিরা হৃৎপিণ্ড বলা হয়ে থাকে।

হৃৎপিণ্ড থেকে CO2-সমৃদ্ধ রক্ত একমুখী প্রবাহে O2 সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য ফুলকায় প্রেরিত হয়। একটি ছন্দময় তালে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংকুচিত হয়। প্রথমে সাইনাস ভেনোসাসে সঙ্কোচন ঘটে। পরে ক্রমে অ্যাট্রিয়াম, ভেন্ট্রিকল ও বাল্বাস আর্টারিওসাস সংকুচিত হয়। হৃৎপিণ্ডের প্রতিবার সঙ্কোচনকে সিস্টোল (systole) বলে। সিস্টোলের পরপরই হৃৎপিণ্ড প্রসারিত হয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। হৃৎপিণ্ডের প্রসারণ প্রক্রিয়াকে বলে ডায়াস্টোল (diastole)। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন কপাটিকা রক্তের একমুখী প্রবাহ নিশ্চিত করে ।

Content added By

রুই মাছের ধমনিতন্ত্র (Arterial System):
রুই মাছের ধমনিতন্ত্র প্রধানত অন্তর্বাহী (afferent) ও বহির্বাহী (efferent) ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি নিয়ে গঠিত।
হৃৎপিণ্ডের ভেন্ট্রিকল থেকে ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টা (অঙ্কীয় মহাধমনি) সৃষ্টি হয়ে সামনের দিকে বিস্তৃত। এ ধমনির গোড়া স্ফীত হয়ে NOTE আর্টারিওসাস গঠন করে। এটি হৃৎপিন্ড থেকে ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টায় রক্তের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। ভেন্ট্রাল অ্যাওটা থেকে যেসব পার্শ্বীয় রক্তনালি পথে CO2 -সমৃদ্ধ রক্ত দুপাশের ফুলকায় বাহিত হয় সেগুলো অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি।
ফুলকা CO2-সমৃদ্ধ রক্ত O2 -সমৃদ্ধ হওয়ার পর যে পার্শ্বীয় নালিগুলো দিয়ে ঐ রক্ত ডার্সাল অ্যাওটা (পৃষ্ঠায় মহাধমনি) তে বাহিত হয় সেগুলো বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি।
ক. অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি (Afferent Branchial Anery):
বাল্বাস অ্যার্টারিওসাস থেকে সৃষ্ট ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টা বা অঙ্কীয় মহাধমনির প্রতিপাশ থেকে ৪টি করে মোট ৪ জোড়া অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি বের হয়। ১ম জোড়া ধমনি প্রথম ফুলকা-জোড়ায় প্রবেশ করে। অনুরূপভাবে, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ জোড়া ধমনি যথাক্রমে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ ফুলকা-জোড়ায় 
CO2 সমৃদ্ধ রক্ত বহন করে।

খ. বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি (Efferent Branchial Artery):
চার জোড়া ফুলকা থেকে চার জোড়া বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনির সৃষ্টি হয়। প্রথম বহির্বাহী ধমনি অঙ্কীয়দেশে হাইঅয়েড আর্চের সিউডোব্রাঙ্কে রক্ত বহন করে এবং সিউডোব্রায়ের সম্মুখে অপথ্যালমিক ধমনি (ophthalmic artery) হিসেবে বিস্তৃত হয়। প্রতি পাশের ১ম ও ২য় বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি মিলে লম্বালম্বি পার্শ্বীয় ধমনি বা ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা (lateral aorta) গঠন করে।

৩য় ও ৪র্থ বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি ল্যাটেরাল আওর্টায় উন্মুক্ত হওয়ার আগে একত্রে মিলিত হয়। ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা সম্মুখে ক্যারোটিড ধমনিরূপে বিস্তৃত হয় এবং করোটিকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। দুপাশের ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা পশ্চাতে একীভূত হয়ে ডর্সাল অ্যাওর্টা (dorsal aorta) গঠন করে এবং পেছন দিকে বিস্তৃত হয়। দুই পাশের ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা ও ক্যারোটিড ধমনি মিলে গলবিল অঞ্চলের পৃষ্ঠীয়দেশে একটি ডিম্বাকার ধমনি বলয় সৃষ্টি করে। এর নাম সারকিউলাস সেফালিকায় (circulus cephalicus)।

রুই মাছের অন্তর্বাহী ও বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি ডার্সাল অ্যাওর্টা মেরুদণ্ডের নিচে মধ্যরেখা বরাবর লেজ পর্যন্ত প্রসারিত। যাত্রাপথে এটি নিম্নোক্ত প্রধান নালিকাগুলো সৃষ্টি করে:

সাবক্ল্যাভিয়ান ধমনি (Subclavian artery) : বক্ষপাখনা ও বক্ষচক্রের দিকে বিস্তৃত হয়।

সিলিয়াকো-মেসেস্টারিক ধমনি (Coeliance-mesenteric artery) : পাকস্থলি, অস্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, মলাশয় প্রভৃতি আন্ত্রিক অঙ্গে রক্ত পরিবহন করে।

প্যারাইটাল ধমনি (Parietal artery) : দেহ প্রাচীরে রক্ত সরবরাহ করে। 

রেনাল ধমনি (Renal artery) : বৃক্কে রক্ত পরিবহন করে। 

ইলিয়াক ধমনি (Iliac artery) : শ্রোণী-পাখনায় রক্ত পরিবহন করে।

কড্যাল ধমনি (Caudal artery): পুচ্ছে রক্ত সরবরাহ করে ।

Content added || updated By

রুই মাছের শিরাতন্ত্র (Venous System of Labeo rohita):
কৈশিক জালিকা (blood capillaries) থেকে উৎপন্ন হয়ে, যেসব রক্তনালি দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন (deoxygenated) রক্ত সংগ্রহ করে হৃৎপিণ্ডের সাইনাস ভেনোসাসে নিয়ে আসে, সেগুলোই সম্মিলিতভাবে শিরাতন্ত্র গঠন করে। রুইমাছের শিরাতন্ত্রকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

সিস্টেমিক শিরাতন্ত্র এবং
পোর্টাল শিরাতন্ত্র।
নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো–

১. সিস্টেমিক শিরাতন্ত্র (Syntemic Venus System):
যেসব শিরার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বা তন্ত্র থেকে রক্ত সরাসরি হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে সেগুলোকে সিস্টেমিক শিরা বলে। সিস্টেমিক শিরার সমন্বয়ে গঠিত হয় সিস্টেমিক শিরাতন্ত্র। এক জোড়া সম্মুখ কার্ডিনাল শিরা, এক জোড়া জুগুলার শিরা ও এক জোড়া পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা রুই মাছের সিস্টেমিক শিরাতন্ত্রের প্রধান অংশ গঠন করে। শরীরের সম্মুখ অংশ থেকে সম্মুখ কার্ডিনাল শিরা ও জুগুলার শিরা রক্ত সংগ্রহ করে সে পাশের ডাক্টাস ক্যুভিয়ে (ductus cuvieri)-তে উন্মুক্ত হয়। পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা দেহের পশ্চাদ্ভাগ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে এবং সে পাশের ডাক্টাস ক্যুভিয়েতে উন্মুক্ত হয়। উভয় পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা সেগমেন্টাল শিরা, রেনাল শিরা, জেনিটাল শিরা ইত্যাদি থেকেও রক্ত গ্রহণ করে। উভয় ডাক্টাস ক্যুভিয়ে হৃৎপিণ্ডের সাইনাস ভেনোসাসে মুক্ত হয়। প্রতি পাশের বক্ষ-পাখনা ও শ্রোণি-পাখনা থেকে সাবক্ল্যাভিয়ান শিরা রক্ত সংগ্রহ করে ডাক্টাস ক্যুভিয়ে-এর মাধ্যমে সাইনাস ভেনোসাসে প্রেরণ করে। এছাড়া ডান ও বাম পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা কতিপয় অনুপ্রস্থ শিরা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এদের অনুগ্রন্থ অ্যানাস্টোমোসিস (transverse annitomosis) বলে।

২. পোর্টাল শিরাতন্ত্র (Portal system) :
কৈশিক নালিকা থেকে উৎপন্ন হয়ে অক্সিজেনবিহীন রক্ত নিয়ে হৃৎপিণ্ডে যাওয়ার পথে যে সব শিরা অন্য কোনো অঙ্গে প্রবেশ করে আবার কৈশিক নালিতে পরিণত হয়, সেগুলোকে পোর্টাল শিরা বলে। পোর্টাল শিরাগুলো নিয়ে পোর্টাল শিরাতন্ত্র গঠিত হয়।

হেপাটিক পোর্টালতন্ত্র ও রেনাল পোর্টালতন্ত্র নিয়ে রুই মাছের পোর্টালতন্ত্র গঠিত।

হেপাটিক পোর্টালতন্ত্র (Hepatic portal system) : যকৃত পোর্টাল শিরা পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্ত সংগ্রহ করে যকতে প্রবেশ করে সেখানে শাখায় বিভক্ত হয়ে রক্ত জালক সৃষ্টি করে। যকৃত শিরা (hepatic vein) এই রক্ত জালক থেকে রক্ত সংগ্রহ করে সরাসরি সাইনাস ভেনোসাসে উন্মুক্ত হয়।

রেনাল পোর্টাল তন্ত্র (Renal portal Bystem) : দেহের লেজ অঞ্চল থেকে কডাল শিরা (caudal vein) রক্ত সংগ্রহ করে দেহকাণ্ডে প্রবেশ করে এবং দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। ডান শাখাটি ডান পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা হিসেবে সম্মুখে অগ্রসর হয়, বাম শাখাটি বৃক্কে প্রবেশ করে বিভক্ত হয়ে জালিকা সৃষ্টি করে। একে রেনাল পোর্টাল শিরা বলে। বৃক্ক থেকে রক্ত বাম পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা সংহাস ক্যুভিয়ের মাধ্যমে সাইনাস ভেনোসাসে পৌঁছায়।

Content added By

Labeo rohita-র শ্বসনতন্ত্র
(Respiratory system of Labeo Rohita):

Labeo একটি অস্থিময় মাছ। চারজোড়া ফুলকা (gill) এ মাছের শ্বসন অঙ্গ। এগুলো মাথার দুপাশে দুটি কানকে (opertculum)-তে আবদ্ধ ফুলকা-প্রকোষ্ঠ (branchial chamber)-এর ভিতর রক্ষিত এবং গলবিলের পার্শ্বপ্রাচীরে মেঝেয় অবস্থিত। কানকোর পশ্চাৎ কিনারা একটি পাতলা ব্রাঙ্কিওস্টেগাল ঝিল্পি (branchiostegal membrane) যুক্ত মাথার অঙ্কীয়দেশে সেঁটে থাকে। ঝিল্লিটি কতকগুলো অস্থিনির্মিত দণ্ড বহন করে। এটি কানকোকে দেহপৃষ্ঠে আটকে রেখে ফুলকা প্রকোষ্ঠ বাইরে থেকে বন্ধ রাখে, এভাবে “শ্বাস পানি” আবদ্ধ রেখে মাছকে শ্বসনে সাহায্য করে।


ফুলকার গঠন (Structure of Gill): প্রত্যেকটি ফুলকা দেখতে সুতার মতো এবং একেকটি হোলোব্রাঙ্ক (পূর্ণফুলকা), কারণ প্রত্যেক ফুলকা দুটি সদ্যৃশ অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত। প্রত্যেক অর্ধাংশকে বলে হেমিব্রাঙ্ক (অর্ধফুলকা)। প্রত্যেক হেমিব্রাঙ্ক একসারি করে ফুলকা সদ্যৃশ (gill filament) বা ফুলকা ল্যামেলা (gill lamella) বহন করে। এগুলো গোড়ায় যুক্ত, শীর্ষে মুক্ত। প্রতিটি সদ্যৃশ এপিথেলিয়ামে আবৃত অসংখ্য অনুপ্রস্থ প্লেট বহন করে। এপিথেলিয়াম রক্ত-জালিকা সমৃদ্ধ। প্রত্যেক ফুলকা একেকটি অস্থিময় ফুলকা আর্চ (gill arch)-এ অবলম্বিত। এভাবে প্রত্যেকে আর্চে দুটি ফুলকা-সারি যুক্ত থাকে। আর্চের অন্তঃকিনারা প্রসারিত হয়ে কাঁটাযুক্ত পাতলা ফুলকা রেকার (gill raker) গঠন করে।

 

Content added By

রুই মাছের শ্বসন প্রক্রিয়াঃ

রুই মাছে দুই ধাপে শ্বাসক্রিয়া ঘাটে শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ। এক্ষেত্রে ফুলকা প্রকোষ্ঠ চোষণ পাম্প (suction pump) হিসেবে কাজ করে।

ক. শ্বাসগ্রহণ বা প্রশ্বাস (Inspiration) : কানকোদুটি যখন উত্তোলিত হয় তখন ফুলকা প্রকোষ্ঠের মুখ ব্রাঙ্কিওস্টেগাল ঝিল্লি দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এতে গলবিলে একটি চোষণ-বলের সৃষ্টি হয়। ফলে মুখছিদ্র রক্ষাকারী মৌখিক কপাটিকা খুলে যায় এবং পানি মুখের ভিতর দিয়ে মুখগহহ্বরে প্রবেশ করে।

খ. শ্বাসত্যাণ বা নিঃশ্বাস (Expiration) : কানকো যখন পেশি-সংকোচনের ফলে নেমে আসে তখন গলবিল ও মুখগহবরে চাপ বেড়ে যায়। সাথে সাথেই মৌখিক কপাটিকা মুখছিদ্রকে বন্ধ করে দেয় এবং ফুলকা প্রকোষ্ঠের ছিদ্র উন্মুক্ত হয়। পানি তখন এ ছিদ্রপথেই বেরিয়ে যায়। মুখ ও গলবিলের ভিতর দিয়ে অতিক্রমের সময় স্রোতপ্রবাহ নিচে অবস্থিত ফুলকাগুলোকে ভিজিয়ে দেয়।

শ্বসনের শারীরতত্ত্ব (Physiology of respiration): অন্তর্বাহী ফুলকা ধমনি CO2-সমৃদ্ধ রক্ত বয়ে এনে ফুলকা সূত্রকের কৈশিক জালকে ছেড়ে দেয়। এসময় স্থান গ্রহণকালে নেয়া O2-সমৃদ্ধ পানি ফুলকা সূত্রকের উপর দিয়ে বয়ে গেলে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে। রত্ন পানিতে CO2 ত্যাগ করে ও পানি থেকে O2 গ্রহণ করে। O2-সমৃদ্ধ রক্ত তখন বহিঃফুলকা ধমনির সাহায্যে গৃহীত হয় এবং সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে।

Content added By

বায়ুথলিঃ Labeo-র মেরুদণ্ডের নিচে এবং পৌষ্টিকনালির উপরে অবস্থিত পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট থলির নাম বায়ুথলি বা পটকা। এটি দেখতে চকচকে সাদা থলির মতো এবং বিভিন্ন ধরনের গ্যাসে (অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড) পূর্ণ থাকে । বায়ুথলিটি সম্মুখস্থ ছোট ও পেছনের বড় প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। দুটি প্রকোষ্ঠের মাঝখানে একটি খাঁজ রয়েছে। সম্মুখ প্রকোষ্ঠ একটি সরু নল দিয়ে অন্ননালির সাথে যুক্ত থাকে । এ নলের নাম নিউম্যাটিক নালি (pneumatic duct)। এটি অন্তঃকর্ণের ওয়েবেরিয়ান অসিকলের সাথে যুক্ত থাকে। বায়ুথলির বাইরের দিক ঘনসন্নিবিষ্ট রক্তজালক সমৃদ্ধ। এর প্রাচীর দুটি স্তর নিয়ে গঠিত । বাইরের যোজক টিস্যু দ্বারা গঠিত স্তর টিউনিকা এক্সটার্না (tunica externa) এবং ভিতরে মসৃণ পেশি নির্মিত স্তর টিউনিকা ইন্টারনা (tunica interna)। বায়ুথলির অন্তঃপ্রাচীরের এপিথেলিয়াম সংলগ্ন একটি লাল বর্ণের গ্যাস গ্রন্থি থাকে। গ্রন্থিতে ঘনসন্নিবিষ্ট অসংখ্য কৈশিকনালি দেখা যায় যাদের রেটিয়া মিরাবিলিয়া (retia mirabilia) বলা হয় । সামনের প্রকোষ্ঠের এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত গ্যাস দ্বারা বায়ুথলি পূর্ণ হয়। কিন্তু পেছনের প্রকোষ্ঠে বিদ্যমান এ গ্রন্থি গ্যাস শোষণ করে।


বায়ুথলির কাজঃ
*বায়ুথলি প্লবতারক্ষাকারী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
বায়ুথলির প্রাচীরে অবস্থিত কৈশিকনালি থেকে বায়ুথলিতে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করে। 
* বায়ুথলি মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব নিয়ন্ত্রণ করে পানির নিচে স্থির থাকতে সাহায্য করে। 
* মাছ বায়ুথলি দ্বারা শব্দ গ্রহণ করতে পারে। বায়ুথলির সাথে ওয়েবেরিয়ান অসিকল (weberian ossicles) এর মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের সংযোগ থাকে । শব্দ তরঙ্গ বায়ুথলি হতে ওয়েবেরিয়ান অর্সিকলের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে।
* অনেক মাছের বায়ুথলি শব্দ উৎপাদনেও সক্ষম ।
* অক্সিজেনের আধার হিসেবেও বায়ুথলি ব্যবহৃত হয়।

Content added By

রুই মাছের জীবনবৃত্তান্ত

রুই মাছের প্রজনন ও জীবনবৃত্তান্তঃ (Reproduction and Life-history):

প্রজনন তন্ত্র (Reproductive system) : জনন ঋতুতে জনন অঙ্গ বা গোনাড (gonad) পূর্ণ বিকশিত হয়। পুরুষ মাছে একজোড়া লম্বা শুক্রাশয় (testis) ও স্ত্রী মাছে একজোড়া লম্বা ডিম্বাশয় (ovary) পটকার নিচে উদরীয় গহ্বরের পিছনে শায়িত। শুক্রাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোৱকিয়াম (mesorchium) পর্দা দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। ডিম্বাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোভেরিয়াম (mesovarium) দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। প্রত্যেক শুক্রাশয় থেকে একটি করে শুক্রনালি সৃষ্টি হয়। দুটি শুক্রাশয়ের দুটি শুক্রনালি পেছন দিকে এক হয়ে রেচনজনন রন্ধ্র পথে বাইরে মুক্ত। স্ত্রী মাছ ডিম্বাশয় জোড়া আকারে বড় ডিম্বনালিহীন। পরিপক্ক ডিম্বাশয় থেকে জনন ঋতুতে ডিম দেহগহ্বরে মুক্ত হয়। এখান থেকে ডিম রেচন-জনন সাইনাসের প্রাচীর থেকে অস্থায়ী এজাড়া জনন রন্ধ্র (genita apernure)- পথে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। রুই মাছের ডিম প্রচুর কুসুম (yolk) সমৃদ্ধ।

প্রজনন (Reproductive) : রুই মাছ সাধারণত দুবছর বয়সে জননক্ষম হয়ে ওঠে। জনন ঘটে স্রোতযুক্ত নদীর পানিতে, বন্ধ পানিতে নয়। বাংলাদেশে আগে ৩ বছর বয়সে জননক্ষম হতো। কিন্তু অন্তঃপ্রজননের (incoding) কারণে এখন রুই মাছে এক বছর বয়সেই জনন ঘটে। জুন-জুলাই মাসের দিকে এরা প্রজননের জন্য তৈরি হয়। সাধরণত স্ত্রী মাছ ৫১-৭০ সেমি এবং পুরুষ মাছ ৬৫ সেমি লম্বা হলে প্রজননের জন্য তৈরি হয়। এ মাছ প্রতি কেজি দেহ ওজনের জন্য এক লক্ষ থেকে চার লক্ষ ডিম উৎপাদন করে থাকে।
 

নিষেক (Fertilization) : নদীর পানি যখন ফুলে ওঠে তখন রুই মাছ নদীর অগভীর অংশে প্রবল বর্ষণের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ হয়। প্রজননের সময় নদীর পানির তাপমাত্রা ২৭-৩০°
 সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।এসময় পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে এবং পানি ঘোলা থাকে। স্ত্রী মাছ প্রথমে পানিতে ডিম (egg) ছাড়লে পুরুষ মাছ তার উপর বীর্য (sperm) ছড়িয়ে দেয়। রুই মাছের নিয়ে দেহের বাইরে নদীর পানিতে সম্পন্ন হয় বলে একে বহিঃনিষেক (extermal fertilization) বলে। নিষিক্ত ডিমকে জাইগোট বলে।

রুই মাছের জীবন চক্র (Life cycle of Labeo Rohita):

জাইগোট সৃষ্টির ৩০-৪৫ মিনিট পরই ক্লিভেজ শুরু হয়। ক্লিভেজ মেরোব্লাস্টিক ধরনের। কোনো প্রাণীর ডিমে যখন ভেজিটাল পোলে (মেরুতে) বেশি পরিমাণে কুসুম থাকায় সম্পূর্ণ ডিমটি ক্লিভেজ প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হতে পারেনা তখন নিষিক নিউক্লিয়াসটি কুসুমের পৃষ্ঠতলে একটি ক্ষুদ্র অংশে আশ্রয় নিয়ে ক্লিভেজের প্রস্তুতি নেয়। অংশটি ক্রমশ একটি ছোট ঢিবির মতো দেখায়। এ অংশের ভিতর ক্লিভেজ ঘটে। এ ধরনের ক্লিভেজকে মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ (meroblastit cleavage) বলে।

ক্লিভেজ শুরু হওয়ার পর নিউক্লিয়াসটি ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ এমন সংখ্যক কোষে বিভক্ত হতে থাকে। ক্লিভেজের ফলে সৃষ্ট প্রতিটি কোষকে ব্লাস্টোমিয়ার (blastomere) বলে। ভ্রূণটি এসময় এক থোকা আঙ্গুরের মতো দেখায়। এর নাম মরুলা (morula)। ভ্রূণের পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে মরুলা ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশি ঝাঁকুনিতে ভ্রূণ কুসুম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। ব্র্যাস্ট্রোমিয়ারগুলো আরও বিভক্ত ও সুশৃঙ্খল হয়ে ব্লাস্টোডার্ম (blastoderm) নামক এককোষীয় স্তরে বিন্যস্ত হয়। ক্লিভেজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাস্টোমিয়ারগুলোর মাঝে একটি ফাঁপা জায়গা সৃষ্টি হয়ে বৃদ্ধি পায়। এ ফাঁপা স্থানটি হচ্ছে ব্লাস্টোসিল (blastocoel)। অগটিকে তখন ব্লাস্টুলা (blastula) বলে। ব্লাস্টোডার্মের কোষগুলো প্রথম দিকে কুসুমের উপর টুপির মতো বিন্যস্ত থাকে। কোষ বিভাজন অব্যাহত থাকায় কোষগুলো কুসুমকে ঘিরে প্রসারিত হয় এবং এক পর্যায়ে ব্লাস্টোপোর (blastopore) নামক একটি ছিদ্রপথ ছাড়া সমগ্র আবৃত হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ব্লাস্টোপোরও বন্ধ হয়ে যায়। ব্লাস্টুলা ধীরে ধীরে দ্বিস্তরী গ্যাস্ট্রুলা (gastrula)–য় পরিবর্তিত হয়।

গ্যাস্ট্রুলার পিছন দিক থেকে লেজ ও সামনের দিক থেকে বিভিন্ন অঙ্গের সূচনা হয়। যে প্রক্রিয়ায় গ্যাস্ট্রুলা থেকে বিভিন্ন অঙ্গ তৈরি হয় তার নাম অর্গানোজেনেসিস (organogenesis)। ভূণের মধ্যে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয় এবং ১৫-১৮ ঘন্টার মধ্যে ডিমের ভিতর থেকে লার্ভা (larva) বেরিয়ে আসে। এ লার্ভাকে ডিমপোনা বা রেণুপোনা বলে । এমন অবস্থায় পোনা কোন খাদ্য গ্রহণ করে না এবং কুসুম থেকে পুষ্টি নেয়। লার্ভা দশার পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপঃ

*৬ ঘন্টা পর লার্ভা মাঝে মধ্যে উপরে-নিচে নড়া-চড়া করে। কুসুমের দুই প্রাস্ত তখন সরু হয় এবং লার্ভার হৃৎপিন্ডের কুসুম থলির সামনে অবস্থান নেয়। তখন কুসুম থলি বেশ বড় থাকে। এ অবস্থায় লার্ভা পানির তলদেশে বেশ সময় কাটায় এবং কুসুম থলি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।

*১২ ঘন্টা পর লার্ভার চোখের রঙ কালো হতে থাকে। ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হওয়ায় এমন হয়। এসময় কুসুম থলি সরু লম্বা হয়।

*২৪ ঘন্টা পর কুসুম থলির পিঠে কালো দাগ দেখা দিতে শুরু করে। লাভায় ফুলকা আর্চ দৃশ্যমান হয়। চোখ মাথার উপরে অবস্থান নেয় এবং নটোকর্ড পিছন দিকে (লেজের দিকে) ঊর্ধ্বমুখী হয়। তখন লেজ ও পায়ু-পাখনা স্পষ্ট দেখা যায়। এ সময় লার্ভা স্বচ্ছ থাকে, তবে ফ্যাকাশে হলদে রঙেরও হতে পারে।

*৩৬ ঘন্টা পর লার্ভায় বক্ষ-পাখনা ও নিচের ঠোঁট স্পষ্ট দেখা যায়। পৃষ্ঠ-পাখনায় কিছু কালো দাগ এবং পুচ্ছ-পাখনায় পুচ্ছ দণ্ড দেখা দেয়।

*৪৮ ঘণ্টা পর লার্তা কিছুটা লম্বা হয়ে ৬.০-৬.৪ মি.মি. হয়। এ সময় কুসুম থলি সামনের দিকে সামান্য উত্তল হয় এবং বায়ু থলি দেখা দেয়। লার্ভার মাথায় ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হতে থাকে, তাই মাথা কালো রঙ ধারণ করে। তখন ফুলকা আর্চ স্পষ্ট এবং দেহ ফ্যাকাশে হলদে রঙে পরিবর্তিত হয়।

*৭২ ঘন্টা পর লার্ভার বায়ু থলি ডিম্বাকার ধারণ করে এবং বক্ষীয় পাখনা স্পষ্ট হতে শুরু করে। পিঠের দু’পাশ উজ্জ্বল হলুদ রঙ ধারণ করে, কুসুম থলি বিলীন হয়ে যায় এবং লার্ভা দশার সমাপ্তি ঘটে। তাপমাত্রার কারণে এ সময়ের কম-বেশি হতে পারে।

*৯৬ ঘন্টা পর লার্ভার মুখ স্পষ্ট হয়ে খাদ্য গ্রহণ শুরু করে। কুসুম থলি প্রায় মিলিয়ে যায় এবং এটি ধানীপোনা বা আঙ্গুলিপোনা হিসেবে পরিচিত হয়।

 *৫ দিন বয়সের পোনা ৮.০-৮.৫ মি.মি. লম্বা হয়। এ সময় লেজের কাছে লাল দাগ দেখা যায়, যা দেখে একে রুই মাছের পোনা বলে শনাক্ত করা যায়। কানকোর রেখা সুস্পষ্ট গঠিত হয়। নটোকর্ডের শেষ প্রান্ত কিছুটা বেঁকে যায় এবং পাখনাগুলোতে রশ্মি আরও স্পষ্ট হয়। 

*১০ দিন বয়সে পোনার দৈর্ঘ্য হয় ১৫-১৮ মি.মি.। সবগুলো পাখনায় পূর্ণাঙ্গ সংখ্যক পাখনা-রশ্মি বিকশি হয়। নাসারন্ধ্র দেখা যায় এবং অন্তঃস্থ বিভাজন স্পষ্ট হয়।

*১৫ দিন বয়সের পোনার দৈর্ঘ্য হয় ২৩ মি.মি.। তখন মুখের দুপাশে একটি করে বার্বেল (barbel) দেখা দেয়, পায়ুর অবস্থান ও খাদ্যনালি স্পষ্ট হয়। এ অবস্থায় আঁইশ দৃশ্যমান না হলেও পোনার দৈহিক গড়ন মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়। 

*এরপর মাছটির কেবল আঙ্গিক পরিবর্তন ও আকারের পরিবর্ধন ঘটে। স্ত্রীমাছ আকারে পুরুষ অপেক্ষা বড় হয়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী ও পুরুষ মাছ যৌন পরিপক্কতা লাভ করে ও প্রজননে সক্ষম হয়।

Content added By

রুই মাছের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ

রুই মাছের প্রাকৃতিক সংরক্ষণঃ

রুই মাছ বাংলাদেশের অতিপরিচিত, সুস্বাদু ও জনপ্রিয় মাছ। এটি Cypriniformes বর্গের Cyprinidae গোত্রভু প্রজাতি। এ গোত্রের মাছগুলো কার্প জাতীয় মাছ (carps) নামে পরিচিত। বাংলাদেশে রুই ছাড়া কাতলা, মৃগেল কালিবাউস প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছও পাওয়া যায়। এগুলোকে বড় কার্প জাতীয় মাছ বলে। বাংলাদেশের প্রায় সব কার বড় নদী (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, হালদা) ও মূল শাখা নদীতে, কাপ্তাই হ্রদ এবং বিভিন্ন হাওরে রুই মা বিস্তৃত।
বড় নদীগুলো হচ্ছে রুই মাছের প্রজনন ক্ষেত্র। মাছের খামারে লালন-পালন শেষে বাজারজাত করা হয়।গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালবৈশাখি ও ভরা অমাবস্যা-পূর্ণিম রুই মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। ডিম থেকে মাছের পোনা যখন আঙ্গুলের সমান বড় হয় (আঙ্গুলিপোনা) তখন সংগ্রহ মাছের খামারে লালন-পালন শেষে বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশের এসব অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক উৎস ক্রমশ ক আসছে (নদী দখল, ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধ, দূষণ ইত্যাদি কারণে), পানির গুণগতমানও নষ্ট হচ্ছে। ফলে মায়ে জিনগত বৈশিষ্ট্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । হ্যাচারির মাছ কখনও প্রাকৃতিক মাছের প্রতিনিধিত্ব করে না। বিজ্ঞানীরা তাই প্রাকৃতি পরিবেশ ও রুই মাছের আবাসস্থলের যথাযথ সংরক্ষণের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। অভ্যন্তরীন নদীগুলো থেকে প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া দূরূহ হয়ে পড়েছে। এ কারণে, অন্ততঃ বিশুদ্ধ রুই মাছের সংরক্ষণে সবার নজর এখন বাংলাদেশের হল নদীর দিকে।

হালদা নদী বাংলাদেশের কেবল একমাত্র দেশি নদী নয়, এটি একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখান থেকে মাছচাষ পোনার বদলে রুই মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এসব ডিম থেকে ফোটানো পোনার বৃদ্ধি যতো দ্রুত বেশি হয় অন্য কোনো জায়গা থেকে সংগৃহীত পোনায় তা হয় না, হ্যাচারীতেতো হয়ই না। এ জন্য এক কেজি রেণুপোন দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা, যা দেশে ন্য জায়গার পোনার দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।(হালদা নদীকে তাই প্রাকৃতিজিনব্যাংক সমৃদ্ধ 'মৎস্য খনি' নামে অভিহিত করা হয। এ নদীসহ অন্যান্য স্থানে রুই মাছের প্রাকৃতিক সংরক্ষণে প্রথম কাজ হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রুই মাছের প্রাকৃতিক বিচরণ স্থলগুলোকে মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা। লক্ষ ও উদ্দেশ্য এবং জলাশয় ভেদে মৎস্য অভয়াশ্রম নিচে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

১. মৌসুমি অভয়াশ্রম : নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উপযুক্ত বা নির্দিষ্ট প্রজনন ক্ষেত্রে বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে নির্দিষ্ট আবাসে বিচরণ করে থাকে। তাই অবাধ প্রজনন ও বিচরণের জন্য সুনির্দিষ্ট জলাশয় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়। যেমন- হালদা নদীর মদুনা ঘাট এলাকা, কাপ্তাই লেকের লং জাদু ও বিলাইছড়ি এলাকা। এখানে হালদা নদীর সামান্য একটি অংশকে (মদুনা ঘাট এলাকা) অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। তাও মৌসুমি অভয়াশ্রম। কিন্তু এ নদীতে সারা বছরই কম-বেশি রুই মাছের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। যেহেতু নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময় এ নদী অরক্ষিত থাকে তাই মানুষ গোপনে সারা বছরই মা-রুই মাছ আহরণে ব্যস্ত থাকে । অতএব বিষয়টি পর্যালোচনা করে যথাশীঘ্র সম্ভব সম্পূর্ণ হালদা নদীকে সাংবাৎসরিক অভয়াশ্রম ঘোষণা করে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। দেশের অন্যান্য নদীতে মৌসুমি অভয়াশ্রম কার্যকর হলেও হালদা নদীকে রুই মাছের জন্য সাংবাৎসরিক অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে হবে।

২. বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা : হালদা নদী রুই মাছের বিশুদ্ধ জিন সংরক্ষণে অবদান রেখে চলেছে।
তাছাড়া, এটি একমাত্র জোয়ার ভাটার নদী যা দেশেরই এক প্রান্তে উৎপত্তি লাভ করে দেশেরই এক স্থানে সমাপ্ত হয়েছে। জোয়ার-ভাটা সমৃদ্ধ অঞ্চল এমনিতেই খুব সমৃদ্ধ কিন্তু অত্যন্ত সংবেদনশীল অঞ্চল। সংবেদনশীলতা ধরে রাখতে পারলে রুইয়ের প্রজনন ও বিচরণ অব্যাহত থাকবে। এ কারণে হালদা নদীকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

Content added By
জানুয়ারি - মার্চ মাস
ফেব্রুয়ারি - মে মাস
জুন - আগস্ট মাস
সেপ্টেম্বর - জানুয়ারি মাস

প্রতীক প্রাণীঃ হাইড্রা

প্রতীক প্রাণী : Hydra
Hydra নিডেরিয়া (Cnidaria) পর্বের সরল ধরনের জলজ প্রাণী। এরা প্রথম দ্বিভ্রূণস্তরী প্রাণী (diploblastic লিনিয়াস (Carolus Linnacus, 1707-1778) এর নাম দেন Hydra । গ্রিক রূপকথার নয় মাথাওয়ালা ড্রাগনের নামানুসারে Hydra-র নামকরণ করা হয়। ঐ ড্রাগনটির একটি মাথা কাটলে তার বদলে দুই বা তার বেশি মাথা গজাতো। Hydra ঐ ড্রাগনের মতো হারানো বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনরায় সৃষ্টি করতে পারে, তাই অনেক সময় বহু মাথাওয়ালা সদস্য আবির্ভুত হয়। মহাবীর হারকিউলিস অবশেষে এ দানবকে বধ করেন ।


বাংলাদেশে Hydra-র বিভিন্ন প্রজাতিঃ

বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন প্রজাতির Hydra পাওয়া যায়। তবে Hydra vulgaris নামক হালকা হলুদ-বাদামী বর্ণের, Pelmatohydra oligactis নামক বাদামী বর্ণের, Chlorohydra viridissima নামক সবুজ বর্ণের এবং Hydra gangetica নামক সাদা বা হালকা গোলাপি বর্ণের Hydra এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার স্বাদ পানির জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রজাতির Hydra-র মধ্যে বাংলাদেশে Hydra vulgaris সুলভ বলে এখানে এ প্রজাতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। Hydra একটি একক মুক্তজীবী প্রাণী। মিঠাপানিতে (খাল, বিল, পুকুর, হ্রদ,ঝর্ণা) নিমজ্জিত কঠিন বস্তু এবং জলজ উদ্ভিদের পাতার নিচের তলে সংলগ্ন থেকে নিম্নমুখী। হয়ে ঝুলে থাকে। স্থির, শীতল ও পরিষ্কার পানিতে এদের অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। ঘোলা, উষ্ণ ও চলমান পানিতে এদের খুব কম পাওয়া যায়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় এরা দেহ ও কর্ষিকাকে সর্বোচ্চ প্রসারিত করে পানিতে দুলতে থাকে। কোন কিছুর সংস্পর্শে এরা দেহকে সঙ্কুচিত করে ফেলে। এরা মাংসাশী অর্থাৎ অন্য কোনো প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করে। কর্ষিকার সাহায্যে খাদ্য গ্রহণ করে। চলাফেরা করে দেহের সংকোচন-প্রসারণ ও কর্ষিকার সাহায্যে দেহপ্রাচীরের মাধ্যমে ব্যাপন (diffusion) প্রক্রিয়ায় শ্বসন ও রেচন সম্পন্ন করে। মুকুলোদগম ও দ্বিবিভাজনের মাধ্যমে অযৌন জনন এবং জননকোষ সৃষ্টি করে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। Hydra-র গায়ে সংলগ্ন দুটি কোষ থাকে। এদের পুনরুৎপত্তি (regeneration) ক্ষমতা প্রচন্ড। হাইড্রার পুনৎপত্তি সম্পর্কে ব্যাখা দেন ট্রেম্বলে।

Content added || updated By
স্বাভাবিক মৃত্যু আছে
বয়স জনিত কারণে মৃত্যু ঘটে
রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়
স্বাভাবিক মৃত্যু নাই
সুঁচ দিয়ে হাইড্রাকে খোঁচা দিলে এর দেহের অংশবিশেষ বা সম্পুর্ণ দেহ প্রসারিত হয়
হাইড্রা বিশ্বজনীন মিঠা পানির মুক্তজীবী ও মাংসাশী প্রাণী
লম্বা দুরত্ব অতিক্রমের জন্য হাইড্রা সাধারনত হামাগুড়ির সাহায্যেই চলে
সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শৈবাল যে O2 নির্গত করে হাইড্রা তা শ্বসনে ব্যাবহার সংকুচিত হবে

হাইড্রার শ্রেণিবিন্যাস

হাইড্রার শ্রেণিতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic Position):

Kingdom: Animalia
  Phylum: Cnidaria
     Class: Hydrozoa 
         Order: Hydroida
             Family: Hydridae
                 Genus: Hydra 
                     Species: Hydra vulgaris

 

Content added || updated By

হাইড্রার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য

Hydra-র বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যঃ

আকার-আকৃতি : Hydra-র দেহ নরম ও অনেকটা নলাকার। দেহের একপ্রান্ত খোলা (ওরাল বা মৌখিক প্রান্ত) এবং অপরপ্রান্ত বন্ধ (অ্যাবওরাল বা বিমৌখিক প্রান্ত)। খোলা প্রান্তে মুখছিদ্র অবস্থিত, আর বন্ধ প্রান্তটি কোনো বস্তুর সাথে যুক্ত থাকে। দেহ Me অরীয় প্রতিসম (radial symmetry) এবং ১০ থেকে ৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা ও প্রায় ১ মিলিমিটার চওড়া।

বর্ণ : প্রজাতিভেদে Hydra-র বর্ণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। Hydra vulgaris প্রায় বর্ণহীন (হালকা হলুদ – বাদামী), তবে গৃহীত খাদ্যের প্রকৃতি অনুযায়ী বর্ণ বৈষম্য দেখা যায় । 

বহির্গঠন : একটি পরিণত Hydra-র দেহকে প্রধানত তিনটি অংশে ভাগ করা যায় : ১. হাইপোস্টোম, ২. দেহকান্ড ও ৩. পদতল বা পাদ-চাকতি । নিচে এসব অংশের বর্ণনা দেয়া হলো।

ক. হাইপোস্টোম (Hypostome) : এটি দেহের মুক্ত প্রান্তে অবস্থিত, মোচাকৃতি, ছোট ও সংকোচন-প্রসারণশীল অংশ। এর চূড়ায় বৃত্তাকার মুখছিদ্র অবস্থিত। মুখছিদ্রপথে খাদ্য গৃহীত ও অপাচ্য অংশ বহিষ্কৃত হয় ।

খ.দেহকান্ড (Trunk): হাইপোস্টোমের নিচ থেকে পদ চাকতির উপর পর্যন্ত সংকোচন প্রসারণশীল অংশটি দেহকান্ড। এতে নিচে বর্নিত অংশ গুলো পাওয়া যায়।

• কর্ষিকা (Tentacle) : হাইপোস্টোমের গোড়ার চতুর্দিক ঘিরে ৬-১০টি সরু, দেহ অপেক্ষা লম্বা ও ফাঁপা সুতার মতো কর্ষিকা অবস্থিত। কর্ষিকার বহিঃপ্রাচীরে অসংখ্য ছোট টিউমারের মতো নিনমাটোসিস্ট ব্যাটারী (nematocyst battery) থাকে। প্রত্যেক ব্যাটারীতে থাকে কয়েকটি করে বিভিন্ন ধরনের নেমাটোসিস্ট। কর্ষিকা ও নেমাটোসিস্ট পারস্পরিক সহযোগিতায় আহার সংগ্রহ চলন এবং আত্মরক্ষায় অংশ নেয়।

• মুকুল (Bud) : গ্রীষ্মকালে যখন পর্যাপ্ত আহার পাওয়া যায় তখন মুকুল সৃষ্টিরও অনুকূল সময়। এমন পরিবেশে দেহের প্রায় মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে এক বা একাধিক মুকুল সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক মুকুল একেকটি নতুন সদস্যের জন্ম দেয় । মুকুলোদগম Hydra-র অন্যতম অযৌন জনন প্রক্রিয়া।

• জননাঙ্গ (Gonad) : হেমন্ত ও শীতকালে দেহকাণ্ডের উপরের অর্ধাংশে এক বা একাধিক কোণাকার শুক্রাশয় (testes) এবং নিচের অর্ধাংশে এক বা একাধিক গোলাকার ডিম্বাশয় (ovaries) নামক অস্থায়ী জননাঙ্গ দেখা যায়। জননাঙ্গ যৌন জননে অংশ গ্রহণ করে।
 


গ. পাদ-চাকতি (Pedal disc) : দেহকাণ্ডের নিম্নপ্রান্তে অবস্থিত গোল ও চাপা অংশে পাদ-চাকতি রসের সাহায্যে প্রাণী কোনো তলের সাথে লেগে থাকে।পাদ-চাকতি থেকে নিঃসৃত রস বুদবুদ (bubble) সৃষ্টি করে প্রাণীকে ভাসিয়ে রাখতেও সাহায্য করে। এদের ক্ষণপদ গঠনকারী কোষের সাহায্যে গ্লাইডিং চলন সম্পূর্ণ হয়।

Content added By

হাইড্রার দেহপ্রাচীরের কোষসমূহ

হাইড্রার দেহপ্রাচীরের কোষসমূহঃ

ক. এপিডার্মিসঃ
১. পেশি-আবরণী কোষ

২. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ

৩. সংবেদী কোষ

8. স্নায়ু কোষ

৫. গ্রন্থি কোষ

৬. জনন কোষ এবং

৭. নিডোসাইট

খ. মেসোগ্লিয়াঃ কোন কোষস্তর নয়, একে সংযোগকারী স্তর বলা হয় ।

গ. গ্যাস্ট্রোডার্মিসঃ
১. পুষ্টি কোষ

২. গ্রন্থি কোষ

৩. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ,

৪. সংবেদী কোষ এবং

৫. স্নায়ু কোষ ।

Content added By
ইহা রেচনে সহায়তা করে
ইহা পৌষ্টিকতন্ত্র ও সংবহনতন্ত্রের কাজ করে
ইহা শুধুমাত্র সংবহনতন্ত্র হিসেবে কাজ করে
কোনোটিই নয়

হাইড্রার নিডোসাইটের কোষসমূহ

আদর্শ নিডোসাইটের গঠন (Structure of a typical Cnidocyte):
Hydra-র একটি আদর্শ নিডোসাইট দেখতে গোল, ডিম্বাকার, নাশপাতি আকার, পেয়ালাকার বা লাটিম আকৃতির এবং নিচে বর্ণিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।

১. আবরণ (Membrane) : প্রতিটি কোষ দ্বিস্তরী আবরণে আবৃত। স্তরদুটির মাঝখানে দানাদার সাইটোপ্লাজম এবং কোষের গোড়ার দিকে একটি নিউক্লিয়াস থাকে।

২. নেমাটোসিস্ট (Nematocyst) : নিডোসাইটের অভ্যন্তরে অবস্থিত, কাইটিনের মতো পদার্থে নির্মিত আবরণে আবৃত ও সুত্রকযুক্ত একটি ক্যাপসুলের নাম নেমাটোসিস্ট। আদর্শ নিডোসাইটে ক্যাপসুলটি প্রোটিন ও ফেনল-এর সমন্বয়ে গঠিত বিষাক্ত তরল হিপনোটক্সিন (Hypnotoxin) এ পূর্ণ থাকে। লম্বা, সরু, ফাঁপা সূত্রকটি যা প্রকৃতপক্ষে ক্যাপসুলেরই অগ্রপ্রান্তের অভিন্ন প্রসারিত অংশ সেটি অবস্থান করে। সূত্রকের চওড়া গোড়াটিকে বাট (butt) বা শ্যাফট (shaft) বলে। এতে তিনটি বড় তীক্ষ্ণ কাঁটার মতো বার্ব (barb) এবং সর্পিল সারিতে বিন্যস্ত ক্ষুদ্রতর কাঁটার মতো অসংখ্য বার্বিওল (barbules) দেখা যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় সূত্রকটি বাট ও কাঁটাসহ থলির ভিতর ঢুকানো থাকে।


৩. অপারকুলাম (Operculum) : স্বাভাবিক অবস্থায় নেমাটোসিস্টের সূত্রক ও ক্যাপসুল যে ঢাকনা দিয়ে আবৃত থাকে তার নাম অপারকুলাম। উন্মুক্ত অবস্থায় এটি পাশে সরে যায়।

৪. নিডোসিল (Cnidocil) : নিডোসাইট কোষের মুক্ত প্রান্তের শক্ত, দৃঢ়, সংবেদনশীল কাঁটাটি নিডোসিল। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি রূপান্তরিত সিলিয়াম (cilium)। নিডোসিল ট্রিগারের মতো কাজ করে ফলে অপারকুলাম সরে যায় এবং প্যাঁচানো সূত্রকটি বাইরে বেরিয়ে আসে।

৫. পেশিতন্তু ও ল্যাসো (Muscle fibre & Lasso) : কোষের সাইটোপ্লাজম ও নেমাটোসিস্টের প্রাচীরে সংকোচনশীল কিছু পেশিতন্তু থাকে। এছাড়াও কোষের নিচের প্রান্তে ল্যাসো নামের একটি প্যাঁচানো সূত্রক দেখা যায়।

 

নেমাটোসিস্টের প্রকারভেদ (Types of nematocysts):
নিক্ষিপ্ত সূত্রকের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী ভার্ণার (Werner) ১৯৬৫ সালে নিডারিয়া জাতীয় প্রাণীদের দেহ থেকে ২৩ ধরনের নেমাটোসিস্ট শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে চার ধরনের নেমাটোসিস্ট Hydra-তে পাওয়া যায়। যথাঃ

১. স্টিনোটিল বা পেনিট্র্যান্ট (Stenotile or Penetrant) : Hydra-র চার ধরণের নেমাটোসিস্টের মধ্যে এগুলোই বৃহত্তম। এদের সূত্রক লম্বা, ফাঁপা, শীর্ষ উন্মুক্ত, বাট প্রশস্ত এবং তিনটি বড় তীক্ষ্ণ বার্ব ও তিন সারি সর্পিলাকারে সজ্জিত অতি ক্ষুদ্র বার্বিউলযুক্ত। এর ভিতরে হিপনোটক্সিন (hypnotoxin) নামক বিষাক্ত তরল থাকে। শিকারের দেহে সূত্রক বিদ্ধ করে বিষাক্ত হিপনোটক্সিন প্রবেশ করিয়ে তাকে অজ্ঞান ও অবশ করে ফেলে।

২. ভলভেন্ট (Valvent) : এগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট। সূত্রকটি খাটো, মোটা, স্থিতিস্থাপক, কাঁটাবিহীন এবং বদ্ধ শীর্ষযুক্ত নেমাটোসিস্ট। ক্যাপসুলের ভিতর সূত্রকের একটি মাত্র প্যাঁচ থাকে, কিন্তু নিক্ষিপ্ত হওয়ার সাথে সাথে কর্ক-স্ক্রুর মতো অনেকগুলো প্যাঁচের সৃষ্টি করে। এটি শিকার কিংবা কোন বস্তুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

৩. স্ট্রেপটোলিন গ্লুটিন্যান্ট (Streptoline glutinant) : এর সূত্রক লম্বা, সর্পিলাকারে সজ্জিত কাঁটাযুক্ত, বাট সুগঠিত নয় এবং শীর্ষদেশ উন্মুক্ত। এগুলো আঠালো রস ক্ষরণ করে চলনে এবং শিকার আটকাতে সাহায্য করে।

৪. স্টেরিওলিন গুটিন্যান্ট (Stereoline glutinant) : এগুলো ক্ষুদ্রতম নেমাটোসিস্ট; সূত্রক লম্বা, কাঁটাবিহীন, বাট সুগঠিত নয় এবং শীর্ষদেশ উন্মুক্ত। এগুলোও এক ধরনের আঠালো রস ক্ষরণ করে চলন ও শিকার আটকে রাখতে সাহায্য করে।

নেমাটোসিস্টের সুত্রক নিক্ষেপের কৌশল
(Mechanism of discharge of Nematocyst-thread): নেমাটোসিস্টের সুত্রক নিক্ষেপ যুগপৎভাবে একটি রাসায়নিক ও যান্ত্রিক প্রক্রিয়া। শিকারের বা শত্রুর সন্ধান অথবা অন্য যেকোনো কারণে নিডোসাইট উদ্দীপ্ত হলে এ প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।  কোনো শিকার 𝐻𝑦𝑑𝑟𝑎-র কর্ষিকার নিকটবর্তী হলে শিকার-দেহের রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে নেমাটোসিস্ট প্রাচীরের পানিভেদ্য ক্ষমতা বেড়ে যায়। এতে থলির ভিতরে দ্রুত পানি প্রবেশ করায় ভিতরের অভিস্রবণিক চাপও বেড়ে যায়। এসময় শিকার নিডোসাইটের নিডোসিল স্পর্শ করামাত্র এর অপারকুলাম খুলে যখন দ্রুত পানি ভিতরে প্রবেশ করায় হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপ (hydrostatic pressure) বেড়ে গেলে নেমাটোসিস্ট-সূত্রক ক্ষিপ্র গতিতে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।

 

Content added By

হাইড্রার বহিঃত্বকের কোষসমূহ

এপিডার্মিস (বা বহিঃত্বক)-এর কোষসমূহঃ
কাজের ভিন্নতা অনুযায়ী Hydra-র এপিডার্মিসের কোষের গঠনে বৈচিত্র্য দেখা যায়। একটি পাতলা ও নমনীয় কিউটিকল (cuticle)-এ আবৃত এপিডার্মিস Hydra-র বহিরাবরণ গঠন করে। Hydra-র এপিডার্মিস ৭ ধরণের কোষ নিয়ে গঠিত। যথাঃ

১. পেশি-আবরণী কোষ (Musculo-Epithelial cell): এপিডার্মিসের সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে এ কোষ অবস্থান করে। বহির্মুখী চওড়া ও অন্তর্মূখী সরু প্রান্তবিশিষ্ট এ কোষগুলো দেখতে কোণাকার। এগুলোর চওড়া প্রান্ত গহ্বরযুক্ত সাইটোপ্লাজোম পূর্ণ, মিউকাস-বস্তুযুক্ত এবং পরস্পর মিলিত হয়ে একটি অভিন্ন আবরণ গঠন করে। ভিতরের সরু প্রান্তের শেষে মায়োনিম (এক ধরনের নমনীয় ও সংকোচন-প্রসারণশীল তন্তু) নির্মিত দুটি পেশি-প্রবর্ধন দেহ অক্ষের সমান্তরালে অবস্থান করে। কর্ষিকায় কোষগুলো বেশ বড় ও চাপা এবং কয়েকটি করে নিডোব্লাস্ট (পরিস্ফুটনরত নিডোসাইট) ধারণ করে।

কাজ : আবরণী কোষের মতো দেহাবরণ সৃষ্টি করে দেহকে রক্ষা করে। প্রবর্ধনগুলো সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে পেশির মতো কাজ করে। মিউকাস দানা কিউটিকল ক্ষরণ করে ও দেহ পিচ্ছিল রাখে। কোষগুলো একাধিক নেমাটোসিস্ট বহন করে। একদিকে দেহাবরণ হিসেবে, অন্যদিকে পেশির মতো কাজ করে বলে এসব কোষকে ‘‘পেশি-আবরণী কোষ” বলা হয়ে থাকে।

২. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell): পেশি-আবরণী কোষের অন্তর্মুখী সরু প্রান্তের ফাঁকে ফাঁকে, গুচ্ছাকারে, মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে এসব কোষ অবস্থান করে। এগুলো গোল বা তিনকোণা এবং সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, রাইবোজোম ও কিছু মাইটোকন্ড্রিয়া যুক্ত।

কাজ: এসব কোষ প্রয়োজনে অন্য যে কোনো ধরনের বহিঃত্বকীয় কোষে পরিণত হয়। পুনরুৎপত্তি ও মুকুল সৃষ্টিতে অংশ নেয় এবং কিছুদিন পরপর অন্যান্য কোষে পরিণত হয়ে দেহের পুরনো কোষের স্থান পূরণ করে।

৩. সংবেদী কোষ (Sensory cell): এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে, সমকোণে ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে, তবে কর্ষিকা, হাইপোস্টোম ও পদতলের চারদিকে বেশি দেখা যায়। প্রতিটি কোষ লম্বা ও সরু। এর মুক্ত প্রান্ত থেকে সূক্ষ্ম সংবেদী রোম (sensory hair) বেরোয় এবং অপর প্রান্ত থেকে গুটিকাময় বা নোডিওল যুক্ত (nodulated) সূক্ষ্ন তন্তু নির্গত হয়ে স্নায়ুতন্তুর সাথে যুক্ত হয়।

কাজ: পরিবেশ থেকে বিভিন্ন উদ্দীপনা (যেমন আলো, তাপ প্রভৃতি) গ্রহণ করে স্নায়ুকোষে সরবরাহ করে।

৪. স্নায়ু কোষ (Nerve cell): এসব কোষ মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত, অনিয়ত আকারবিশিষ্ট এবং একটি ক্ষুদ্র কোষদেহ ও দুই বা ততোধিক নোডিওলযুক্ত সূক্ষ্ন শাখান্বিত স্নায়ুরোম নিয়ে গঠিত। তন্তুগুলো পরস্পর মিলে স্নায়ু-জালিকা গঠন করে।

কাজ: সংবেদী কোষে সংগৃহীত উদ্দীপনা দেহের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে।

৫. গ্রন্থি কোষ (Gland cell): এগুলো ক্ষরণকারী দানাবিশিষ্ট এক ধরনের পরিবর্তিত লম্বাকার এপিডার্মাল কোষ। মুখছিদ্রের চারদিকে ও পাদ-চাকতিতে প্রচুর গ্রন্থি কোষ দেখা যায়।

কাজ: মিউকাস ক্ষরণ করে দেহকে কোনো বস্তুর সঙ্গে লেগে থাকতে সাহায্য করে; বুদবুদ সৃষ্ট করে ভাসতে সাহায্য করে। ক্ষণপদ সৃষ্টির মাধ্যমে চলনে অংশগ্রহণ করে এবং মুখছিদ্রের গ্রন্থিকোষের ক্ষরণে সাহায্য করে।

৬. জনন কোষ (Germ cell): এসব কোষ জননাঙ্গে অবস্থান করে। জননকোষ দুধরনের: শুক্রাণু ও ডিম্বাণু। পরিণত শুক্রাণু অতি ক্ষুদ্র এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি স্ফীত মস্তক, সেন্ট্রিওলযুক্ত একটি সংকীর্ণ মধ্যখন্ড ও একটি লম্বা বিচলনক্ষম লেজ নিয়ে গঠিত। এর সাথে তিনটি পোলার বডি (polar bodies) যুক্ত থাকে।

কাজ: যৌন জননে অংশগ্রহণ করা।


৭. নিডোসাইট (Cnidocyte): Hydra-র পদতল ছাড়া বহিঃত্বকের সর্বত্র বিশেষ করে কর্ষিকার পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে বা ঐসব কোষের ভিতরে নিডোসাইট অনুপ্রবিষ্ট থাকে। কোষগুলো গোল, ডিম্বাকার বা পেয়ালাকার এবং নিচের দিকে নিউক্লিয়াসবাহী ও দ্বৈত আবরণবেষ্টিত বড় কোষ। কোষের মুক্তপ্রান্তে ক্ষুদ্র, দৃঢ়, সংবেদী নিডোসিল (cnidocil) এবং অভ্যন্তরে গহবর ও প্যাঁচানো সুতাযুক্ত নেমাটোসিস্ট বহন করে। গহ্বরটি অপারকুলাম (operculum) দিয়ে ঢাকা। আদর্শ নেমাটোনিস্টের সুতার গোড়ায় ৩টি বড় কাঁটার মতো বার্ব (barb) থাকে এবং গহ্বরটি হিপনোটক্সিন (Hypnotoxin) নামক বিষাক্ত রসে পূর্ণ। পরিস্ফুটনরত নিডোসাইটকে নিডোব্লাস্ট (cnidoblast) বলে।

Content added || updated By

হাইড্রার অন্তঃত্বকের কোষসমূহ

গ্যাস্ট্রোডার্মিস (বা অন্তঃত্বক)-এর কোষসমূহঃ
এপিডার্মিস অপেক্ষা গ্যাস্ট্রোডার্মিস-এর গঠন অনেকটা সরল এবং নিচের পাঁচধরনের কোষ নিয়ে গঠিত।

১. পুষ্টি কোষ বা পেশি-আবরণী কোষ (Nutritive cell or Musculo -Epithelial Cells) : গ্যাস্ট্রোডার্মিসের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে এসব কোষ অবস্থিত। প্রতিটি কোষ স্তম্ভাকার এবং একটি বড় নিউক্লিয়াস ও গহ্বরযুক্ত। সংযুক্ত প্রান্ত থেকে সূক্ষ্ণ, সংকোচনশীল তন্তুবিশিষ্ট পেশি প্রবর্ধন সৃষ্টি হয়ে মেসোগ্লিয়ার সমকোণে অবস্থান করে । ভেতরের মুক্ত প্রান্তের গঠনের উপর ভিত্তি করে পুষ্টি কোষসমূহকে দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

• ফ্ল্যাজেলীয় কোষ (Flagellated cell) : এগুলোর মুক্ত প্রান্তে ১-৪টি সুতার মতো ফ্ল্যাজেলা সংযুক্ত থাকে। 
• ক্ষণপদীয় কোষ (Pseudopodial cell) : এগুলোর মুক্ত প্রান্ত ক্ষণপদযুক্ত।

কাজ : পেশি প্রবর্ধনগুলো সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহকে সরু ও মোটা করে। মুখ ও কর্ষিকার গোড়ায় অবস্থিত পেশি-প্রবর্ধনগুলো নিজের ছিদ্র বন্ধ করতে স্ফিংক্টার (sphincter)-এর মতো কাজ করে। ফ্ল্যাজেলীয় কোষের ফ্ল্যাজেলা আন্দোলিত হয়ে খাদ্যবস্তু ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে। এ কোষ প্রয়োজনে আন্দোলিত হয়ে মুখছিদ্রপথে পানি প্রবেশ করায় । ক্ষণপদীয় কোষের ক্ষণপদ খাদ্যকণা গলাধঃকরণ করে অন্তঃস্থ খাদ্যগহ্বরে পরিপাক করে।

২. গ্রন্থি কোষ (Gland cell) : বিক্ষিপ্তভাবে পুষ্টিকোষের ফাঁকে ফাঁকে এসব কোষ অবস্থান করে। এগুলোর সংখ্যা মূল দেহ এবং হাইপোস্টোমে সর্বাধিক, পদতলে স্বল্প এবং কর্ষিকায় অনুপস্থিত।  গ্রন্থিকোষ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও পেশি-প্রবর্ধনবিহীন। এরা দুরকম হয়ে থাকে-

• মিউকাস ক্ষরণকারী (Mucous secreting) : এগুলো প্রধানত হাইপোস্টোম অঞ্চলে অবস্থিত এবং পিচ্ছিল মিউকাস ক্ষরণ করে।
• এনজাইম ক্ষরণকারী (Enzyme secreting) : অন্যান্য স্থানের কোষগুলো ধরনের যা থেকে পরিপাকের জন্য এনজাইম ক্ষরিত হয়।

কাজ : হাইপোস্টোমের গ্রন্থিকোষ নিঃসৃত মিউকাস খাদ্যদ্রব্য পিচ্ছিল করে গলাধঃকরণে সাহায্য করে। অন্যান্য স্থানে গ্রন্থিকোষ সিলেন্টেরণে এনজাইম-এর ক্ষরণ ঘটিয়ে পরিপাকে সাহায্য করে।


৩. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell) : এগুলো  পেশী আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে এসব কোষ এপিডার্মিস থেকে আগত কোষ । এগুলো গোল বা ত্রিকোণাকার এবং সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, মসৃণ এণ্ডোপ্লাজমিক জালিকায় মুক্ত রাইবোসোম ও কিছু মাইটোকন্ড্রিয়া বহন করে ।


কাজ : এন্ডোডার্মিসের প্রয়োজনীয় যে কোনো কোষ গঠন করাই এর কাজ।

৪. সংবেদী কোষ (Sensory cell) : এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থিত । প্রতিটি কোষ লম্বা শু সরু । কোষের মুক্ত প্রান্ত থেকে নির্গত সূক্ষ্ণ সংবেদী রোম সিলেন্টেরণে উদগত এবং মেসোগ্লিয়া সংলগ্ন প্রান্ত থেকে নির্গত স্নায়ুতন্তুর সাথে যুক্ত থাকে ।

কাজ : সম্ভবতঃ পানির সাথে সিলেন্টেরণে প্রবেশিত খাদ্য ও অন্যান্য পদার্থের গুণাগুণ যাচাই করে স্নায়ুকোষে প্রেরণ করে এবং স্নায়ুকোষ উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

৫. স্নায়ু কোষ (Nerve cell) : এসব কোষ মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত, সংখ্যায় খুব কম। অনিয়ত আকারবিশিষ্ট এবং একটি ক্ষুদ্র কোষদেহ ও দুই বা ততোধিক সূক্ষ্ণ শাখান্বিত তন্তু নিয়ে গঠিত। তন্তুগুলো পরস্পর মিলে স্নায়ু-জালিকা গঠন করে।

কাজ : সংবেদী কোষে সংগৃহীত উদ্দীপনা স্থানান্তর করাই এর কাজ।

মেসোগ্লিয়াঃ

Hydra র এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিস এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত জেলির মতো, স্বচ্ছ, স্থিতিস্থাপক তলা এবং মেসোগ্লিয়া বলে। মেসোগ্লিয়া স্তরটি দেহ এবং কর্ষিকা উভয় স্থানে বিকৃত থাকো। তবে কর্ষিকায় সবচেয়ে পাতে সাহায্য পাদ-চাকতিতে সর্বাধিক পুরু । মেসোগ্লিয়ার এ ধরনের বিন্যাস পাদ-চাকতির অতিরিক্ত যান্ত্রিক প্রসারণ প্রতিরোধে উভয় করে এবং কর্ষিকাকে অধিকতর নমনীয়তা প্রদান করে। Hydra-র মেসোগ্লিয়া প্রায় ০১ মাইক্রোমিটার পুরু। উভয় স্তরের কোষ মেসোগ্লিয়া গঠনে অংশ গ্রহণ করে।

কাজ : (i) মেসোগ্লিয়া দেহকে সাপোর্ট করতে সহায়তা করে এবং এক ধরনের ইলাস্টিক কঙ্কাল হিসেবে কাজ করে। (ii) মেসোগ্লিয়া দুটি কোষস্তরের ভিত্তিরূপে কাজ করে। (iii) স্নায়ুকোষ ও সংবেদী কোষতন্তুসমূহ এবং পেশি-আবরণী কোষের সংকোচনশীল মায়োফাইব্রিল ধারণ করে। (iv) মেসোগ্নিয়ায় অবস্থিত পেশি-আবরণী কোষের সংকোচনশীল মায়োফাইব্রিলের সংকোচনে দেহ বা কর্ষিকা খাটো হয়। ফলে দেহ বাঁকানো সম্ভব হয় ।

সিলেন্টেরন (Coelenteron):

Hydra-র দেহের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত ফাঁকা গহ্বরকে সিলেন্টেরন বলে। এটি গ্যাস্ট্রোডার্মিস দ্বারা পরিবৃত্ত থাকে। এতে খাদ্যের বহিঃকোষীয় পরিপাক ঘটে এবং খাদ্যসার, শ্বসন ও রেচন পদার্থ পরিবাহিত হয় বলে একে গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর (gastrovascular cavity) বা পরিপাক সংবহন গহ্বর বলা হয়। কর্ষিকাতে সিলেন্টেরন প্রসারিত থাকে বলে এগুলো ফাঁপা হয়। দেহের উপরিভাগে অবস্থিত একটি মাত্র ছিদ্র, মুখছিদ্র দ্বারা সিলেন্টেরন বাইরে উন্মুক্ত হয়।

Content added || updated By
মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত
বিক্ষিপ্তভাবে পুষ্টি কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থান করে
পেশি অবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থান করে
অন্তঃত্বকের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে অবস্থিত

হাইড্রার খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক প্রক্রিয়া

হাইড্রার খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক প্রক্রিয়া
হাইড্রার খাদ্যঃ
হাইড্রা মাংশাসী প্রাণী। এরা প্রধানতঃ সাইক্লোপস, ড্যাফনিয়া ইত্যাদি ক্রাসটেসিয়া জাতীয় ক্ষুদ্রাকার আর্থোপডা পর্বের প্রাণী ভক্ষণ করে। তাছাড়া হাইড্রা মাছের ডিম, কীট-পতঙ্গের লার্ভা ও অন্যান্য কিছু কিছু আণুবীক্ষণিক প্রাণী খেয়ে থাকে।

হাইড্রার খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতিঃ
ক্ষুধার্ত হলে হাইড্রা পাচাকতির সাহায্যে কোন তলের সাথে সংলগ্ন হয়ে কর্ষিকাগুলাে পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে শিকারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

এমন অবস্থায় কোন খাদ্য বা প্রাণী বা শিকার কাছে আসলে কর্ষিকার নিডােব্লাস্ট কোষগুলাে থেকে অসংখ্য নিমাটোসিস্ট শিকারের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয়।

ভলভ্যান্ট নেমাটোসিস্টগুলাে শিকারের উপাঙ্গাসমূহ পেঁচিয়ে ধরে এবং পেনিট্র্যান্ট নিমাটোসিস্ট শিকারের দেহে হিপ্নোটক্সিন নামক বিষাক্তরস প্রবেশ করিয়ে তাকে অবশ করে ফেলে। এসময় অন্যান্য কর্ষিকাগুলাে শিকার ধরতে সাহায্য করে।

মুখছিদ্রের চারপাশে মিউকাস গ্রন্থি পিচ্ছিল মিউকাস নিঃসৃত করে খাদ্য গলাধঃকরণে সহায়তা করে। হাইপােস্টোম এবং দেহপ্রাচীরের কোষগুলাের সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্য সিলেন্টেরণে প্রবেশ করে।

পরিপাক (Digestion)
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অদ্রবণীয়, অশােষণীয়, জটিল খাদ্য নির্দিষ্ট উৎসেচকের প্রভাবে আর্দ্র-বিশ্লেষিত হয়ে দ্রবণীয়, শোষণীয়, সরল খাদ্যে পরিণত হয়, তাকে পরিপাক বলে।

হাইড্রার খাদ্য পরিপাক পদ্ধতিঃ
হাইড্রার মুখছিদ্রের চারদিকে অবস্থিত পেশী-আবরণী কোষ প্রসারিত হয়েমুখছিদ্র খুলে যায়। এসময় কর্ষিকার সাহায্যে খাদ্য মুখের ভিতর দিয়ে সিলেন্টেরণে প্রবেশ করলে সিলেন্টেরণে খাদ্য পরিপাক হয়। এন্ডােডার্মের গ্রন্থিকোষমূহ থেকে উৎসেচক এবং মিউকাস নিঃসৃত হয়। ফ্লাজেলাযুক্ত পেশী আবরণী কোষ সমূহের ফ্লাজেলা আন্দোলনের দ্বারা সিলেন্টেরণের মধ্যে জীবিত খাদ্য মারা যায় ও কিছুটা চূর্ণ বিচূর্ণ হয় এবং উৎসেচক ও মিউকাসের সাথে মিশ্রিত হয়। ফলে সিলেন্টেরণের মধ্যে খাদ্য আংশিক পরিপাক হয়।

হাইড্রায় দুই ধরনের পরিপাক সংঘটিত হয়।যথাঃ
(ক) বহিঃকোষীয় পরিপাক ও (খ) অন্তঃকোষীয় পরিপাক।

(ক) বহিঃকোষীয় পরিপাক
কোন নির্দিষ্ট কোষের অভ্যন্তরে পরিপাক না হয়ে কোষের বাইরে কোন নালী বা থলির মধ্যে যে পরিপাক সংঘটিত হয় তাকে আন্তঃকোষীয় বা বহিঃকোষীয় পরিপাক বলে।

হাইড্রার সিলেন্টেরণে আন্তঃকোষীয় বা বহিঃকোষীয় পরিপাক পদ্ধতিতে খাদ্যের কিছুটা পরিপাক ঘটে। সিলেন্টরণে এই আংশিক পরিপাককৃত খাদ্য এরপর ফ্যাগােসাইটোসিস পদ্ধতিতে হাইড্রার এন্ডােডার্মের ক্ষণপদযুক্ত পেশীআবরণী কোষসমূহে প্রবেশ করে।এই কোষের অভ্যন্তরে খাদ্যগহ্বরে খাদ্য জমা হয় ও পরিপাক হয়।

(খ) অন্তঃকোষীয় পরিপাক
কোনও নির্দিষ্ট কোষের অভ্যন্তরে খাদ্য পরিপাক হওয়ার পদ্ধতিকে অন্তঃকোষীয় পরিপাক বলে। হাইড্রার ক্ষণপদযুক্ত পেশী আবরণী কোষের অভ্যন্তরে অন্তঃকোষীয় পরিপাক ঘটে।

পরিশােষণ (Absorption):
পরিপাককৃত সরল খাদ্য অর্থাৎ এ্যামাইনাে এসিড, গ্লুকোজ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল ক্ষণপদযুক্ত পেশী আবরণী কোষের সাইট্রোপ্লাজমে শােষিত হয়।

অপর পক্ষে অপাচ্য বর্জ্যপদার্থ পানির সাথে মুখছিদ্রের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। সুতরাং হাইড্রার সিলেন্টেরণে আন্তঃ বা বহিঃকোষীয় এবং ক্ষণপদযুক্ত পেশী আবরণী কোষে অন্তঃকোষীয় পরিপাক সম্পাদিত হয়।

Content added By

Hydra-র চলনঃ
যে প্রক্রিয়ায় জীবদেহ জৈবিক প্রয়োজনে নিজ চেষ্টায় স্থানান্তরিত হয়, তাকে চলন বলে। সাধারণত এটি প্রাণীর এক স্বতঃস্ফূর্ত সহজাত আচরণ। প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলায়, জনন, খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষা, বিনোদন প্রভৃতি কারণে জীব স্থানান্তরে গমন করে। Hydra সাধারণত নিমজ্জিত বস্তু বা উদ্ভিদের গায়ে সংলগ্ন থাকে, তবে বিভিন্ন উত্তেজকে সাড়া দেয়ার জন্য বা খাদ্য গ্রহণের জন্য স্থান ত্যাগ করতে হয়। চলনের সময় প্রথমে সংবেদী কোষ সাড়া দেয় এবং সে বার্তা বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের স্নায়ু-জালকের ভিতর সঞ্চালিত হয়। ফলে পেশিতন্তু সঙ্কুচিত হয় এবং চলন প্রক্রিয়া শুরু হয়। Hydra-য় নিচে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের চলন দেখতে পাওয়া যায়।

১. লুপিং (Looping) বা ফাসাচলন : লম্বা দূরত্ব অতিক্রমের জন্য Hydra সাধারণত লুপিং চলনের আশ্রয় নেয়। এ প্রক্রিয়ার শুরুতে এক পাশের পেশি-আবরণী কোষগুলো সঙ্কুচিত হয় এবং অপর পাশের অনুরূপ কোষগুলো সম্প্রসারিত হয়। ফলে Hydra গতিপথের দিকে দেহকে প্রসারিত করে ও বাঁকিয়ে মৌখিক তলকে ভিত্তির কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং কর্ষিকার গ্লুটিন্যান্ট নেমাটোসিস্টের সাহায্যে ভিত্তিকে আটকে ধরে। এরপর পাদ-চাকতিকে মুক্ত করে মুখের কাছাকাছি এনে স্থাপন করে এবং কর্ষিকা বিযুক্ত করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এ পদ্ধতির পুনারাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra স্থান ত্যাগ করে৷ জোঁক বা শুঁয়াপোকা চলার সময় যেভাবে ক্রমান্বয়িক লুপ বা ফাঁসের সৃষ্টি হয় হাইড্রার এ চলনও দেখতে অনেকটা একই রকম হওয়ায় ফাঁসাচলনকে জোঁকা চলন বা শুঁয়াপোকা চলন নামেও অভিহিত করা যায়।


২. সমারসল্টিং (Somersaulting) বা ডিগবাজী : এটি Hydra-র সাধারণ ও দ্রুত চলন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার শুরুতে Hydra দেহকে বাকিয়ে চলনের গতিপথে কর্ষিকায় অবস্থিত গুটিন্যান্ট জাতীয় নেমাটোসিস্টের আঠালো ক্ষরণের সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে। এ সময় গন্তব্যস্থলমুখী পেশি-আবরণী কোষের সংকোচন ও অপর পাশের অনুরূপ কোষের সম্প্রসারণ ঘটে। পরে পাদ-চাকতি বিযুক্ত করে কর্ষিকার উপর ভর দিয়ে দেহকে সোজা করে দেয়। পুনরায় দেহকে বাঁকিয়ে পাদ-চাকতির সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে। পরে কর্ষিকা মুক্ত করে দেহকে সোজা করে দেয়। এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
৩. গ্লাইডিং (Gliding) বা অ্যামিবয়েড চলন : এ প্রক্রিয়ায় Hydra পদতলের বহিঃত্বকীয় কোষগুলো থেকে পিচ্ছিল রস ক্ষরণ করে। পরে ঐ স্থান থেকেই প্রক্ষিপ্ত কোষীয় ক্ষণপদের অ্যামিবয়েড চলনের সাহায্যে দেহটি অত্যন্ত ধীরগতিতে মসৃণতলে খুব সামান্য দূরত্বে স্থানান্তরিত হয়।

৪. ভাসা (Floating) : মাঝে মাঝে Hydra পাদ-চাকতির বহিঃত্বকীয় কোষ থেকে গ্যাসীয় বুদবুদ সৃষ্টি করে, ফলে প্রাণী ভিত্তি থেকে বিচ্যুত, হালকা ও উপুর হয়ে পানির পৃষ্ঠতলে ভেসে ওঠে। এখানে বুদবুদ ফেটে মিউকাস ভেলার মতো ছড়িয়ে গেলে Hydra নিম্নমূখী হয়ে ভেসে থাকে। এভাবে প্রাণী ডেউয়ের আঘাতে কিছুদূর ভেসেও যেতে পারে।

৫. সাঁতার (Swimming) : কর্ষিকাগুলোকে ডেউয়ের মতো আন্দোলিত করে এবং দেহকে ভিত্তি থেকে মুক্ত করে Hydra সহজেই দেহকে ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত করে সাঁতার কাটতে পারে।

৬. হামাগুড়ি (Crawling) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra কর্ষিকার সাহায্যে কাছাকাছি কোনো বস্তুকে আঁকড়ে ধরে। পরে পাদ-চাকতি মুক্ত ও কর্ষিকা সংকুচিত করে পাদ-চাকতিকে নতুন জায়গায় স্থাপন করে। এ প্রক্রিয়ায় Hydra-র আরোহণ ও অবরোহণ সম্পন্ন হয়।

৭. হাঁটা (Walking) : এ ক্ষেত্রে Hydra তার দেহের ভার পাদ-চাকতির উপর না রেখে কর্ষিকার উপর স্থাপন করে এবং কর্ষিকাকে পায়ের মতো ব্যবহার করে উল্টোভাবে ধীর গতিতে চলতে পারে।

৮. দেহের সংকোচন-প্রসারণ (Body contraction and expansion) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra দেহকে মুক্ত করে দেহপ্রাচীরের পেশি-আবরণী কোষের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে দেহের আকার দ্রুত খাটো ও লম্বা করে, ফলে এক ধরনের চলনের সৃষ্টি হয়।

Content added || updated By
গ্রন্থি কোষ
প্রন্থি কোষ
ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ
পেশি আবরণী কোষ

Hydra–র জননঃ Hydra অযৌন ও যৌন উভয় প্রক্রিয়ায় বংশ বৃদ্ধি করে।  

অযৌন জনন (Asexual reproduction):
গ্যামেট উৎপাদন ছাড়াই যে জনন সম্পাদিত হয় তাকে অযৌন জনন বলে। এ ধরনের জনন পদ্ধতিতে একটি মাত্র জনিতা থেকেই নতুন জীবের সৃষ্টি হয়। Hydra দু’ভাবে অযৌন জনন সম্পন্ন করে, যথা— মুকুলোদগম ও বিভাজন।


১. মুকুলোদগম (Budding) : এটি অযৌন জননের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বছরের সব ঋতুতেই বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ থাকায় এটি বেশি ঘটে। নিম্নোক্ত বেশ কয়েকটি ধাপে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

*প্রক্রিয়ার শুরুতে দেহের মধ্যাংশ বা নিম্নাংশের কোন স্থানের এপিডার্মিসের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ দ্রুত বিভাজিত হয়ে একটি ক্ষুদ্র স্ফীত অংশের সৃষ্টি করে।
স্ফীত অংশটি ক্রমশ বড় হয়ে ফাঁপা, নলাকার মুকুল (bud)-এ পরিণত হয়। এতে এপিডার্মিস, মেসোগ্লিয়া ও গ্যাস্ট্রোডার্মিস সৃষ্টি হয়।
*মাতৃহাইড্রার সিলেন্টেরন মুকুলের কেন্দ্রে প্রসারিত হয়।
*মুকুলটি মাতৃহাইড্রা থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে বড় হয় এবং শীর্ষপ্রান্তে গঠিত হয় মুখছিদ্র, হাইপোস্টোম ও কর্ষিকা।
*এসময় মাতৃহাইড্রা ও মুকুলের সংযোগস্থলে একটি বৃত্তাকার খাঁজের সৃষ্টি হয়। খাঁজটি ক্রমে গভীর হয়ে মুকুল তথা অপত্য হাইড্রাকে মাতৃহাইড্রা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
*অপত্য হাইড্রার বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রান্তে পাদ-চাকতি গঠিত হয়।
*শিশু হাইড্রা কিছুক্ষণ বিচরণের পর নিমজ্জিত কোনো বস্তুর সংলগ্ন হয়ে স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করে।

ঘটনাক্রমে একটি Hydra-য় বেশ কয়েকটি মুকুলের সৃষ্টি হতে পারে। এসব মুকুল আবার নতুন মুকুল সৃষ্টি করতে পারে। সম্পূর্ণ মাতৃ Hydra-কে তখন একটি দলবদ্ধ প্রাণীর মতো দেখায়। মুকুল সৃষ্টি এবং মাতৃ Hydra থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন জীবন-যাপন করতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগে।

২. বিভাজন (Fission) : বিভাজন কোনো স্বাভাবিক জনন প্রক্রিয়া নয় কারণ এটি দৈবাৎ সংঘটিত হয়। কোন বাহ্যিক কারণে হাইড্রার দেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রত্যেক খণ্ড থেকে নতুন হাইড্রা জন্মায়। একে পুনরুৎপত্তি (regeneration) বলে, কারণ এ প্রক্রিয়ায় দেহের হারানো বা বিনষ্ট অংশ পুনর্গঠিত হয়।

প্রকৃতিবিজ্ঞানী ট্রেম্বলে (Trembley) ১৭৪৪ সালে সর্বপ্রথম Hydra-র পুনরুৎপত্তি ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন অংশের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ অতিদ্রুত বিভক্ত ও রূপান্তরিত হয়ে বিভিন্ন কোষ সৃষ্টি করে। এসব কোষ দিয়ে দেহের এ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন অংশ গঠনের মাধ্যমে অপত্য হাইড্রার বিকাশ ঘটে। সুতরাং হাইড্রার স্বাভাবিক মৃত্যু নেই। বিভাজন দুভাবে হতে পারে, যথা- অনুদৈর্ঘ্য বিভাজন ও অনুপ্রস্থ বিভাজন।

অনুদৈর্ঘ্য বিভাজন : হাইড্রার দেহ কোনো কারণে লম্বালম্বি দুই বা ততোধিক খন্ডে বিভক্ত হলে প্রত্যেক খণ্ড থেকে পৃথক হাইড্রার উৎপত্তি হয়।
অনুপ্রস্থ বিভাজন : কোনো কারণে হাইড্রার দেহ অনুপ্রস্থভাবে একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রত্যেক খণ্ড থেকে পুনরুৎপত্তি প্রক্রিয়ায় নতুন হাইড্রা জন্ম লাভ করে।


যৌন জনন (Sexual reproduction):

নিষেকের মাধ্যমে জাইগোট সৃষ্টির উদ্দেশে দুটি পরিণত জননকোষের (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) নিউক্লিয়াসের একীভবন প্রক্রিয়াকে যৌন জনন বলে। Hydra-র যৌন জননকে আলোচনার সুবিধার জন্য তিনটি শিরোনামভুক্ত করা যায়, যেমন- অস্থায়ী জননাঙ্গ সৃষ্টি, নিষেক ও পরিস্ফুটন।

১. অস্থায়ী জননাঙ্গ সৃষ্টি : অধিকাংশ হাইড্রা একলিঙ্গ (dioecious), তবে কিছু সংখ্যক উভলিঙ্গ (monoecious)–ও আছে। উভলিঙ্গ হলেও এদের স্বনিষেক ঘটে না, কারণ জননাঙ্গগুলো বিভিন্ন সময়ে পরিপক্কতা লাভ করে। প্রধানত শরৎকালে খাদ্য স্বল্পতার মতো প্রতিকূল পরিবেশে এদের দেহে অস্থায়ী জননাঙ্গের সৃষ্টি হয় এবং যৌন জনন ঘটে। পুরুষ ও স্ত্রী জননাঙ্গকে যথাক্রমে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় বলে।

ক. শুক্রাশয়ের উৎপত্তি : প্রজনন ঋতুতে সাধারণত দেহের উপরের অর্ধাংশে ও হাইপোস্টোমের কাছাকাছি স্থানের এপিডার্মাল ইন্টারস্টিশিয়াল কোষের দ্রুত বিভাজনের ফলে এক বা একাধিক মোচাকার শুক্রাশয় (testis) সৃষ্টি হয়। এর শীর্ষে একটি বোঁটা বা নিপল (nipple) এবং পরিণত শুক্রাশয়ের অভ্যন্তরে থাকে অসংখ্য শুক্রাণু। শুক্রাশয়ে শুক্রাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটোজেনেসিস (spermatogenesis) বা শুক্রাণুজনন বলে। শুক্রাশয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ বারংবার মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে স্পার্মাটোগোনিয়া (spermatogonia) সৃষ্টি করে। পরে এগুলো বৃদ্ধিলাভ করে স্পার্মাটোসাইট (spermatocyte)-এ পরিণত হয়। প্রত্যেক স্পার্মাটোসাইট মিয়োসিস বিভাজনের ফলে ৪টি করে হ্যাপয়েড স্পার্মাটিড (spermatid) উৎপন্ন করে। প্রত্যেক স্পার্মাটিড একেকটি শুক্রাণু sperm-তে পরিণত হয়। প্রত্যেক পরিণত শুক্রাণু নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি স্ফীত মস্তক (head), সেন্ট্রিওলযুক্ত একটি সংকীর্ণ মধ্যখন্ড (middle piece) এবং একটি লম্বা, সরু, বিচলনক্ষম লেজ (tail) নিয়ে গঠিত।


খ. ডিম্বাশয়ের উৎপত্তি  : প্রজনন ঋতুতে দেহের নিচের অর্ধাংশে, কিন্তু পদতলের সামান্য উপরে এপিডার্মিসের একটি বা দুটি স্থানের কিছু ইন্টারস্টিশিয়াল কোষের বারংবার বিভাজনের ফলে সাধারণত একটি বা দুটি গোলাকার ডিম্বাশয় (ovary) সৃষ্টি করে। প্রত্যেক ডিম্বাশয় থেকে একটি করে ডিম্বাণু (ovam) সৃষ্টি হয়। ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরে ডিম্বাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে উওজেনেসিস (oogenesis) বা ডিম্বাণুজনন বলে।

প্রথমে ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে ওগোনিয়া (oogonia) গঠন করে। এগুলোর মধ্যে কেন্দ্রস্থ একটি কোষ বড় হয়ে উওসাইট (oocyte)-এ পরিণত হয় এবং ছোট কোষগুলোকে গলাধঃকরণ করে। এটি তখন মিয়োসিস বিভাজন ঘটিয়ে ৩টি ক্ষুদ্র পোলার বডি (polar body) ও ১টি বড় সক্রিয় উওটিড (ootid) সৃষ্টি করে। উওটিডটি রূপান্তরিত হয়ে ডিম্বাণুতে পরিণত হয়। পোলার বডিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। ডিম্বাণুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধির ফলে ডিম্বাশয়ের বহিরাবরণ ছিঁড়ে যায় এবং ডিম্বাণুকে উন্মুক্ত করে দেয়। এর চারদিকে তখন জিলেটিনের পিচ্ছিল আস্তরণ থাকে।


২. নিষেক (Fertilization) : শুক্রাণু পরিণত হলে শুক্রাশয়ের নিপল বিদীর্ণ করে ডিম্বাণুর সন্ধানে পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে সাঁতরাতে থাকে। ২৪ – ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে না পারলে এগুলো বিনষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, উন্মুক্ত হওয়ার পর অল্পদিনের মধ্যে নিষিক্ত না হলে ডিম্বাণুও নষ্ট হয়ে ক্রমশ ধ্বংস হতে থাকে। শুক্রাণুর ঝাঁক একেকটি ডিম্বাণুর চারদিক ঘিরে ফেলে। একাধিক শুক্রাণু ডিম্বাণুর আবরণ ভেদ করলেও একটি মাত্র শুক্রাণুর নিউক্লিয়াসই ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসের সাথে একীভূত হয়ে নিষেক সম্পন্ন করে এবং একটি ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট (zygote) গঠন করে।

৩. পরিস্ফুটন (Development) : যেসব ক্রমান্বয়িক পরিবর্তনের মাধ্যমে জাইগোট থেকে শিশু প্রাণীর উৎপত্তি ঘটে তাকে পরিস্ফুটন বলে। জাইগোট নানা ধরনের পরিস্ফুটন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ হাইড্রায় পরিণত হয়।

হাইড্রার পরিস্ফুটনকালে নিম্নোক্ত পর্যায়সমূহ দেখা যায়।

ক. মরুলা (Morula) : জাইগোট মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বারবার বিভক্ত হয়ে বহুকোষী, নিরেট ও গোলাকার কোষপিণ্ডে পরিণত হয়। এর নাম মরুলা।

খ. ব্লাস্টুলা (Blastula) : শীঘ্রই মরুলার কোষগুলো একস্তরে সজ্জিত হয়ে একটি ফাঁপা, গোল ভ্রূণে পরিণত হয়। এর নাম ব্লাস্টুলা। ব্লাস্টুলার কোষগুলোকে ব্লাস্টোমিয়ার (blastomere) এবং কেন্দ্রে ফাঁকা গহ্বরকে ব্লাস্টোসিল (blastocoel) বলে।

গ. গ্যাস্ট্রুলা (Gastrula) : ব্লাস্টুলা গ্যাস্ট্রুলেশন (gastrulation) প্রক্রিয়ায় দ্বিস্তরবিশিষ্ট গ্যাস্ট্রুলায় পরিণত হয়। এটি এক্টোডার্ম, এন্ডোডার্ম ও আদি সিলেন্টেরন নিয়ে গঠিত। মাতৃদেহের সাথে সংযুক্ত এ গ্যাস্ট্রুলাকে স্টেরিওগ্যাস্ট্রুলা (stereogastrula) বলে। গ্যাস্ট্রুলার চারদিকে একটি কাইটিন নির্মিত কাঁটাযুক্ত সিস্ট (cyst) আবরণী গঠিত হয়। সিস্টবদ্ধ ভ্রূণটি মাতৃহাইড্রা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পানির তলদেশে চলে যায়।

ঘ. হাইড্রুলা (Hydrula) : বসন্তের শুরুতে অনুকূল তাপমাত্রায় সিস্টের মধ্যেই ভ্রূণটি ক্রমশ লম্বা হতে থাকে এবং এর অগ্রপ্রান্তে হাইপোস্টোম, মুখছিদ্র ও কর্ষিকা এবং পশ্চাৎপ্রান্তে পাদ-চাকতি গঠিত হয়। ভ্রূণের এ দশাকে হাইড্রুলা বলে। হাইড্রুলা সিস্টের আবরণী বিদীর্ণ করে পানিতে বেরিয়ে আসে এবং স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করে।

Content added By
প্রতিকূল পরিবেশে
অযৌন প্রজননের সময়
যৌন প্রজননের সময়
ভ্রূণ পরিস্ফটনকালে
প্রতিকূল পরিবেশে
অযৌন প্রজননের সময়
যৌন প্রজননের সময়
ভ্রূণ প্রস্ফুটন কালে
মশা তাড়াতে SO2 একটি কার্যকরী ধোঁয়া
অর্গান অব কর্টি ককলিয়াতে অবস্থিত
মানুষের মাঝে ম্যালেরিয়া জীবাণুর অযৌনচক্র অতিবাহিত হয়
দ্বিবিভাজন Hydra এর একটি সহজ বংশবৃদ্ধির পদ্ধতি

মিথোজীবীতাঃ যখন দুটি ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীব ঘনিষ্ঠভাবে সহাবস্থানের ফলে পরস্পরের কাছ থেকে উপকৃত হয়, তখন এ ধরনের সাহচর্যকে মিথোজীবিতা বলে। এ অবস্থায় জীবদুটিকে মিথোজীবী (symbiont) বলা হয়। Chlorohydra viridissima নামক সবুজ হাইড্রা ও Zoochlorella নামক শৈবাল এর মধ্যে এ সম্পর্ক সুস্পষ্ট প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। নিম্নোক্তভাবে এরা পরস্পরের কাছ থেকে উপকৃত হয়।

শৈবালের প্রাপ্ত উপকারঃ

•আশ্রয়ঃ শৈবাল হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মাল (অন্তঃকোষীয়) পেশি-আবরণী কোষে আশ্রয় পায় ; •সালোকসংশ্লেষণঃ হাইড্রার শ্বসনে সৃষ্ট CO2-কে সালোকসংশ্লেষণের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে; •খাদ্যোৎপাদন : হাইড্রার বিপাকীয় কাজে উদ্ভূত নাইট্রোজেনজাত বর্জ্য পদার্থকে আমিষ তৈরির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে।


Hydra-র প্রাপ্ত উপকারঃ

•খাদ্যপ্রাপ্তিঃ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শৈবাল যে খাদ্য প্রস্তুত করে তার উদ্বৃত্ত অংশ গ্রহণ করে হাইড্রা শর্করা জাতীয় খাদ্যের অভাব পূরণ করে;
•শ্বসনঃ সালোকসংশ্লেষণকালে শৈবাল যে O, নির্গত করে হাইড্রা তা শ্বসনে ব্যবহার করে;
•CO, শোষণঃ হাইড্রার শ্বসনে সৃষ্ট CO, শৈবাল গ্রহণ করে প্রাণীকে ঝামেলামুক্ত করে; 
•বর্জ্য নিষ্কাশনঃ হাইড্রার বিপাকে সৃষ্ট N♭-ঘটিত বর্জ্য শৈবাল কর্তৃক গৃহীত হওয়ায় হাইড্রা সহজেই বর্জ্যপদার্থ মুক্ত হয়।

Content added By
সবুজ হাইড্রা ও জুক্লোরেলা
হাইড্রা ও ছত্রাক
মশা ও মানুষ
সবগুলাে
শৈবাল ও Hydra vulgaris এর মধ্যে
শৈবাল ও Chlorohydra viridissima এর মধ্যে
শৈবাল ও Hydra gangetica এর মধ্যে
শৈবাল ও plmatohydra oligactis এর মধ্যে

Promotion

Promotion